Monday, July 30, 2018

ত্রিমাত্রিক বন্ধনে


কখনও কোনো এক অন্য ত্রিমাত্রিক বন্ধনে
যদি ছুঁয়ে দি, যদি বিন্দু বিন্দু মিলে যায় অন্য এক জ্যামিতিক আকারে
যদি নীলে মিশে যায় নীল, শব্দের কম্পাঙ্ক খুঁজে ফেরে নষ্ট সাইন কার্ভ
যেখানে সময় শিশিরের মত জমা হয় ডাক বাক্সের খাঁজ বেয়ে,
যেখানে সিঁড়ির ঘরে লুকোলে বাজে নিঝুম স্বপ্নের সুর,
সেখানে যদি খুলে দি তোর বাঁধন, যদি চুঁইয়ে পড়ি তোর ঘাড় চুল ঠোঁট বেয়ে।
তুই না করতে পারবি না, তুই হ্যাঁ করতে পারবি না...
শুনতে পাবিনা তোর নিজের ধুকপুকুনি, বলবোনা আমি কিছু তোকে।
শুধু বয়ে যাবো তোর গাল-গলা-বুক বেয়ে।

Sunday, July 29, 2018

একটি চতুর্মাত্রিক প্রেমের গল্প


ব্যাডি, মানে বোধিসত্ত্ব সেন জাতে বদ্যি পেশায় বাজনদার। ও ভালো লাগল না, না? বাজনদার মানে হল গিয়ে ডিজে। রাতের বেলা চোখে চাঁদ চশমা চড়িয়ে, আজে বাজে গানের সাথে ভালো গানের মিশেল পাকিয়ে, মাঝে মাঝে থমকে থামিয়ে এক উদ্ভট ঘণ্ট পাকিয়ে চালায়, আর একগাদা অবোধ, আধমাতাল ছেলেমেয়ে তাতে তাল জ্ঞানহীন জগঝম্প করে খুব মজা পায়।
না না, এসব আমার ভাবনা নয় মোটেই, এরকম ভাবে ব্যাডির একমবেদ্বিতীয়ম বন্ধু দেবদীপ্ত ব্যানার্জী। তা ব্যাডির আজ প্রায় বছর সাত-আটেক হল সুর্য্য দেবের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। উনি সকালে উঠে আলো দিতে বেরোন, ব্যাডি তখন ঘুমায়, ব্যাডি সন্ধ্যেবেলা বেরোয় সুর্য্যদেব তখন পাটে যান। এককথায় ব্যাডি নিশাচর প্রানী, সত্যিই সে রাতে চড়েই বেড়ায়।
এই অবধি ব্যাডির কথা থাক, ব্যাডিতে ফিরব আবার তার আগে বাড়ুজ্জে বামুনের সাথে একটু পরিচয় করেনি। দেবদীপ্ত ব্যানার্জী আজীবন স্কুলের ফার্স্ট বয়, প্রথম সারিতে বসত, ক্লাস নাইনের পর আর মাঠমুখো হয়নি, আইআইটি-র প্রস্তুতি নিয়ে জয়েন্টে দারুণ রেজাল্ট করে এখন সে ভালো চাকুরে ইঞ্জিনিয়ার। এরকম একটি রত্নসম ছেলের সাথে ব্যাডির প্রাণের বন্ধুত্ব হওয়া শাস্ত্রমতে অনুচিত, হতও না যদি না এর পিছনে অন্য কারো অবদান না থাকত।
এইখানে একটু নেপথ্য কাহিনী না বলে নিলে আমার কলম অবধি চুলকোচ্ছে। নেপথ্য কাহিনীর নায়কের নাম চতুর্মুখ, তাঁকে কেউ কোনোদিন দেখেনি কেউ পুজোও করেন না, তিনি একগাদা অপগন্ডকে ঢেলে পৃথিবীতে পাঠিয়ে শান্তিতে আট চোখ বুজে ঝিমুতে পারতেন, কিন্তু বুড়ো বয়স হলে যা হয় আরকি, ওঁরও ভীমরতি হল, কলির তালে নাচলেন চতুর্মুখও।
ব্যাডির বাবা কালাচাঁদ সেন হলেন পদার্থবিদ্যার শিক্ষক, চাইলেই উনি অধ্যাপক হতে পারতেন, তবে মেরুদন্ড সোজা না হলে মাথার পরিচর্যা করে কি হবে এই দর্শনে উনি শিক্ষকতাই বেছে নিলেন। উনি রেজাল্ট দেখে ছাত্র ছাত্রী নেন না। ওঁর কতগুলো নিজস্ব পরীক্ষা আছে পাশ করলে তবেই পড়ান এবং পারিশ্রমিক বাবদ ছাত্র ছাত্রীদের কিছু বই পড়তে বলেন, সেগুলো পড়তেই হয় এটাই নিয়ম। একবার এক ক্লাশ এগারোর ছাত্রকে তার টেস্ট পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ায় নিজে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন, ‘ইন সার্চ অফ শ্রডিঙ্গার’স ক্যাট...’, বড় বড় করে এইটাই নাম ভেবে ছেলেটি ভাবল থ্রিলার বা অ্যাডভেঞ্চারের গপ্পো হবে বুঝি কোনো, কিন্তু পাশে একটা কোলন দিয়ে লেখা ছিল, ‘কোয়ান্টাম পিজিক্স অ্যান্ড রিয়েলিটি’ তা খেয়াল করেনি। কালাচাঁদ বাবু আবার বই দিয়ে পড়া হল কিনা জিজ্ঞাসা করতেন, মাস দুয়েক পর তার বাবা এসে বলেন, তার ছেলে নাকি বিজ্ঞান নিয়ে আর পড়বেনা ঠিক করেছে, এবছরটা বসে গিয়ে সামনের বছর কলা বিভাগে ভর্তি হবে। বিরক্ত বোধ করলে কালাচাঁদ বাবুর নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে ঘোঁত করে একটা শব্দ বেরোয়।
তবে, দেবদীপ্ত অন্য জাতের ছেলে কালাচাঁদ বাবুকে স্কুল কামাই করে আলাদা করে পড়াশুনা করতে হয়, এইরকম প্রশ্নও তার কাছে মজুত থাকত। গাছেরা ত্রিমাত্রিক স্তরের বাইরের স্তর অনুভব করতে পারে কিনা এই নিয়ে একটা উদ্ভট প্রশ্ন করে সে একবার কালাচাঁদ বাবুকে ঘোঁত শব্দ করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু এইখানে এইবার একটা সমস্যা এল, সবই ষড়যন্ত্র, নইলে এমন কালাচাঁদ বাবু রুচিস্মিতা নামের আদুরে একটা মেয়েকে তার শুধু একটু ভালো করে পড়াশুনা করতে চাওয়ার ইচ্ছায় বিনা পরীক্ষায় ব্যাচ শুরু হয়ে যাওয়ার আড়াই মাস বাদে ভর্তি নেন? তারপরের মাসদুয়েক ও ভালোই চলেছিল, ব্যাপারটা শুরু হল তৃতীয় মাসের প্রথম শনিবারে।
কি একটা কাজে কালাচাঁদ বাবুকে একটু বেরোতেই হল, বেরোনোর আগে বলে গেলেন, রুচিস্মিতা তুমি দেবদীপ্তর কাছ থেকে পুরোনো পড়া গুলো একটু বুঝে নাও। এইবার আমাদের আবার একটু নেপথ্যে যেতেই হচ্ছে। চতুর্মুখের বয়স গোনা যাবে সে ক্যালকুলেটর তো আবিষ্কার হয়নি এবার ওঁর বয়সের হিসাব কে দেবে? আর একটা বয়সের পর বয়সে গিঁট পড়ে যায় জানেন তো, এই সময়ে শুড্ডাদের ফকরামিতে মন যায়। তিনি ঠিক সেই সময় তীর ধনুক হাতে করে রতিভর্তা কে পাঠালেন অকুস্থলে। মদন দেব বলেছিলেন বার বার যে, ‘দেখুন প্রজাপতি, বিজ্ঞানের ক্লাসে বান ঠিক কাজে আসেনা’। তা ইয়ার্কির সময় কি ফাজলামি ভালো লাগে? চতুর্মুখের-ও লাগেনি।
যে সময়ের কথা হচ্ছে সে সময়ে মোবাইল ফোন এলেও এত রমরমা হয়নি আর দেবদীপ্তর এইসব ফঙ্গবেনে জিনিসে উৎসাহও ছিল না, কিন্তু দু সপ্তাহে রুচিস্মিতার পাশে বসা, তার না বোঝানো বুঝিয়ে দেওয়া ইত্যাদির ফাঁকে তার হৃদি ভেসে গেল পচা গঙ্গার জলে। একদিন ফিজিক্স বই এর ফাঁকে দেবদীপ্ত একটা চিঠি পেল, মানে ঐ দু লাইনের চিরকূট- “একটু কি তাকানো যায়না!” তলায় ছোট্ট করে লেখা ‘আর’। হ্যাঁ দেবদীপ্তর ভাগ্যটা এরকমই ছিল। তা তারপর দেবদীপ্ত বার করলো এই আর-ই হল রুচিস্মিতা। দেবদীপ্ত ছিল জন্মেইছিল সতেরোর ঘরের নামতা মুখস্থ করতে করতে, ও ছিল মেঘনাথ সাহার পুনর্জন্ম, তবু কামিনী কাঞ্চনে কত মুনি ঋষি টলে গেছেন! এরকম সময় যা হয়, ভালো ছেলেরা ইয়ে করলেও ইয়ে করতে পারেনা, তা একজন মুখপাত্র দরকার। সেই হল ব্যাডির আগমন।
তারপর পচা গঙ্গাতেও ফ্লো আসে মাঝে মাঝে, আর যে রাঁধে সে চুল বাধতে পারলেও ‘যে পড়ে সে করেনা’ গুরুবাণী। কিন্তু প্রথম প্রেমের দুঃখ ফাগুনের মনখারাপের মত, স্বয়ং যোগীনাথ কয়েকযুগ মনখারাপ করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে দেবদীপ্ত তো, বেচারা! এসব ক্ষেত্রে প্রেম কেটে বাঙ্গালী বন্ধু পায় আর প্রেম হয়ে গেলে বন্ধু বিচ্ছেদ, দেবদীপ্ত আর ব্যাডি বন্ধু হয়ে গেল।

Friday, July 27, 2018

গন্ধ-পুরান



একটা রেস্তোরা লোকেরা খাচ্ছে... একটা লোক নাক তুলে খুব শোঁকার চেষ্টা করছে মুখে নৈরাশ্য
আরেকজনকে ও একটু বাদেই দেখা যায় সেও একই কাজ করছে, মানুষ যারা আছে সব ডি-ফোকাসড
১- পেলি ভাই?
২- নারে, একেবারে যা তা হয়ে গেছে সমাজটা
১- কলিকাল বুঝলি ঘোর কলি, পুরো রসাতলে গেছে
২- শালারা জিম করে না!
১- আরে না না কিসব ডায়েটিং ফায়েটিং হয়েছে না ওইসব কেরদানির ফল
২- যা বলেছিস, বাঙ্গালীর আর কিছু রইল না রে, প্যান্টুলুন পড়ে দেখবি খুলে বেরিয়ে যাবে মনে হয়
১- ট্রেন্ড! তবে দেখনা আমায় যদি একটু পাস...
২- আরে এখানে দেখছিস না কেমন ভিড় আমায় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাছাড়া আজকাল তো লোকের দমের জোর নেই, তোকে মনে হয়...
১- খালি নিজের দিকে ঝোল টানা নারে? দেখছিস তো কিসব শাক পাতা জাবনা কাটছে এখানে আমায় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি না।
২- শাক পাতায় তুই? হাঃ তুই হবি হল গিয়ে আমিষে, মুরগী মটন এইসব হল তোর আস্তানা
১- আর তুই?
২- তা ধর প্রায় আমি প্রায় সর্বত্র বহমান
১- আর আমি বানের জলে ভেসে এসেছি না রে?
২- না না তা কেন হবে, তবে ইদানীং লোকে খায় আধপেটা ঘুমোয় কম তোকে রাখবে কোথায়?
১- তা হলে তোর তো কোনো চান্স-ই নেই রে, বরং ফাঁকা পেট থেকে আমার একটা হাল্কা...
২- নাহ তোকে তো আবার ক্লাসে যেতে হবে দেখছি, তুই পুরো তোর জব ডেসক্রিপশন ভুলে গেছিস।
১- শোন ভাই তোর আর আমার স্ট্যাটাসটা জানিস তো আমি কিন্তু তোর থেকে অনেক বেশি অ্যাক্সেপ্টেড
২- এ তোর সম্পুর্ন ভুল ধারণা, তুই কিন্তু বেসিক্যালি ওয়ান ডাইমেনশনাল
১-আর তুই বুঝি ত্রিমাত্রিক?
২- আচ্ছা আচ্ছা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভালো না, চারিদিকে দেখছিস না নতুন ক্যাডারে ভরে গেছে
১- হ্যাঁরে ভাই, আমাদের আর সবরা আজে বাজে জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে গেছে
২- তোর ‘ফুরররর’ কে মনে আছে?
১- থাকবে না? তিন স্টেপে বেরোত ও উফ তারপর কি বিস্তার
২- সেসবও দিন ছিল, পোশাক আশাক ও পালটে গেছে একটু জায়গা না পেয়ে চাপতে চাপতে একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছি আমরা
১- তারপর ঐ গুপী যন্ত্র খাবে কোথায় মন দিয়ে তা না, দেখ না দেখ ওদিকে...
-হঠাৎ একটা স্যুট বুট পড়া লোক এগিয়ে আসে,
৩- এক্সকিউজ মি, ওটা আমার!
বলে এগিয়ে গিয়ে লোকটার মাথা টিপে ধরে
তার কোটের পিছনে বড় বড় করে লেখা ‘ডিপ্রেশন’
২- ভাই আমরা কি ভুসুক, কুক্কুটদের মত ইতিহাস হয়ে যাব?

ক্যামেরা একটু পিছনে সরে আসে, ১-র পিছনে লেখা ‘ভড়াৎ’ আর ২-এর পিছনে লেখা ‘ফুউস’।

Friday, July 20, 2018

রূপ দেখতে তরাস লাগে..



সে এক দেশে ছিল এক রাজা আর ছিল তার রানী।
এই অবধি আমরা জানি।
রাজার ছিল বহুমূত্র রোগ।
করতে পারত না সুখ ভোগ
ফলত: দুর্ভোগ।
দুর্ভোগ মানে, এত বড় রাজা, যার হাতিশালে হাতি,আর ঘোড়াশালে ঘোড়া, তার বাড়িতে একটা ছেলে পুলে নেই। টাট্টু ঘোড়ায় চড়বে কে? রাজার ভেবেই বহুমূত্র রোগ চাগাড় মারে। 
রাজ্যে শান্তি থাকলেও সুখ নেই, প্রজাদের সকলের মুখে কোষ্ঠ পরিষ্কার না হওয়ার দুঃখ। গ
হাসত শুধু একটা বিড়াল। বিড়ালটা রাজজ্যোতিষীর বাড়িতে থাকত মাঝে মাঝে। রাজ জ্যোতিষী একদিন মাঝরাতে উঠে দেখেন ঘরের মাঝখানে একটা কালো কুচকুচে বেড়াল
ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হাসছে। জ্যোতিষী জানতো না বেড়াল কোন দেশে পুজো হয়, তাই বুঝতেও পারেনি কোথা থেকে এল বেড়ালটা যেই তাড়াতে গেছে, অমনি শোনে, বেড়ালটা বলছে, 'এই যাও'। বুড়ো ভাবল বুঝি ম্যাঁও করেছে ফ্যাঁস করে, কিন্তু কানে যে শুনল যাও!
কিছুদিন পর বুড়ো দেখে বিড়ালটা অঙ্ক কষছে, কাছে গেলেই বিড়াল যাও বলে তাড়িয়ে দেয়, তাই সে বাহ্যে গেলে জ্যোতিষী দেখে মাটির উপর বিভিন্ন মাপের দাগ কাটা। রাতে জ্যোতিষী বসে কুপি জ্বালিয়ে পুঁথি পড়েন অঙ্ক কষেন মঙ্গলের বক্র গতি, শনির আড়াই প্যাঁচ বুধের ঘরে, বিড়ালও অঙ্ক কষে চোখ জ্বলে তার। কদিন বুড়ো ভাবনায় অস্থির, নাওয়া খাওয়া নেই, বিড়ালটা হাসতে হাসতে বলে উঠল,
ক্যাঁও, অহ, অং ইঞা, বুড়ো শোনে ক্যায়া বাত মেরে এনেছি, হাসে আর গড়িয়ে পড়ে যায়, আবার অঙ্ক কষে। পড়াশুনা মাথায় উঠল জ্যোতিষীর, রাজবাড়ি যায়না সাত দিন। চুলে যেদিন জট পড়ল সেদিন বিড়াল বলল, ররঙ.. ব্যয়ও... য় র ল ব শ’। বুড়ো তো বিছানায় বসে তিন হাত লাফিয়ে উঠে মাথায় টাক খেয়েছে, বিড়াল বাংলা বলছে, নির্ঘাত নৃসিংহ দেব আবার ছোট করে ফিরে এসেছেন। বুড়ো আরো শুনল বিড়াল বলছে, রাজার বিয়ে, রাজার ছেলে, নতুন রানী, রক্ত গঙ্গা, দেশের মরার হাড়ের হরির লুট। শুনল তবে বুঝল কিচ্ছু না, বিড়াল কথা বলছে এই না কত! বিড়াল আরেকবার কুটিপাটি হেসে, থাবা দিয়ে মাটির অঙ্ক হিজিবিজি করে দিয়ে, বুড়োর আফিমের জলে মুখ দিয়ে বিষম খেয়ে চলে গেল, যাবার আগে যেন বলে গেল আবার আসব
পরদিন রাজা লোক পাঠাল জ্যোতিষীকে নিয়ে আসতে। বুড়ো সেদিন মাথার জট ছাড়িয়ে ক্ষউড়ি করে রাজার বাড়িই যাবে ঠিক করেছিল। পথে যেতে যেতে শুনল রাজা শিকারে যাবার দিন জানতে চায়। বিড়ালের কথা কানে বাজে জ্যোতিষীর। পেটের কথা পেটে চেপে রাখে বুড়ো, রাতে হরীতকী ভেজানো জল খায়, বায়ু না হয় যাতে
এদিকে রাজা সৈন্য সামন্ত, পাত্র-মিত্র, জগাই-মাধাই, বেয়াই বোনাই নিয়ে চললেন শিকারে। এক জঙ্গল পেরুলেন রাজা, মারলেন একটা বুনোমোষ। সে ব্যাটা বুড়ো হয়ে গেছিল, রাজার ভালোলাগলনা, রাজা পরের জঙ্গলের দিকে এগোলেন। পাত্র-মিত্রদের পেট ব্যাথা করছিল তারা র‍য়ে গেল সেখানেই। পরের জঙ্গলে রাজা মারলেন একটা ভাল্লুক, সে মধু খেয়ে পড়েছিল, রাজার তাও ভালোলাগলনা। আবার হাতঘোড়া সাজল রাজা পরের জঙ্গলে যাবেন। সৈন্য সামন্তদের পায়ে ঝি ঝি ধরে গেল, তারা রয়ে গেল। এবার রাজা চলেন আগে আগে, পিছনে মন্ত্রী আর কোটাল। তৃতীয় জঙ্গলে রাজা একটা হরিণ মারলেন, রাজার তীর গায়ে নিয়ে হরিণ দিল এক ছুট। রাজা হুকুম দিলেন, ‘লে আও বাঁধকে’, কেউ গেলনা! রাজা নিজেই নামলেন ঘোড়া থেকে। জঙ্গলের ভিতর গেলেন অনেকদুর, কোন পথে এসেছিলেন কোন পথে যাবেন গুলিয়ে গেল। রাজা একটা নুয়ে পড়া বড় গাছ ধরে দাঁড়ালেন একটু জিরিয়ে নেবেন বলে, হঠাৎ শোনেন একটা হাল্কা কান্নার আওয়াজ। কেউ কোত্থাও ছিলনা এই একটু আগে পর্যন্ত হঠাৎ কাঁদে কে? তাকিয়ে দেখেন একটা মেয়ে, সুন্দরী বেশ তবে চেহারাটা বেশ বড়সর। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, কে? কি বৃত্তান্ত? এই জঙ্গলে তুমি একা কেন? মেয়ে বলে, বিয়ের রাতে তার স্বামী পিড়িতে বসার আগে মারা গেছে, তার বাড়ির লোকজন তাকে ত্যাগ করেছে, যাবার কোথাও নেই। রাজা শুধালেন, ‘বয়স কত তোমার?’। মেয়েটি চোখের জল মুছে, রাজার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের বয়স বলল। রাজা ভাবলেন, যাকে দেখেনি, শোনেনি সে মরে গেছে কোন রোগে ভুগে তার জন্য বেচারীর কষ্ট! বললেন, ‘নিয়ে যাব তোমায় আমার রাজ্যে, সেখানে আমার রানী আছেন, তুমি থাকবে অন্য মহলে, তোমায় রানীর মতই রাখব। কিন্তু আমার ঘোড়াটা?’ রাজা চিন্তায় পড়লেন। মেয়েটা দুটো খচ্চর জোগার করে এনেদিল।
রাজামশাই দিন তিনেক পরে, খচ্চরের পিঠে চেপে নতুন একটা মেয়েকে নিয়ে রাজ্যে এলেন। ঢাক ঢোল, ঢ্যাঁড়া, বাদ্যি বাজনা, উলু-শঙ্খ কিচ্ছু বাজল না। পুরনো রানী তিন দিন কিছু খেলেন না, তারপর একমাস পর নতুন মেয়েটা রাজার পাশে রাজ দরবারে বসল আর জ্যোতিষীর আবার ডাক পড়ল। রাজা উৎসাহ ভরে জিজ্ঞাসা করলেন গ্রহ তারা নতুন করে কি বলছে? রাজার ছেলে হবে কিনা? নতুন মেয়েটা তার হাত দেখাতে গিয়ে বুড়ো জ্যোতিষীকে হাত দেখাতে গিয়ে নখ দিয়ে চেপে চোখ পাকিয়ে কি যেন বলতে চাইল, বুড়ো দেখল রাজার হাতে জোড়া সন্তান, তবে পুত্রসুখে রাজা বঞ্চিত। জ্যোতিষী গণনার ফল বলে চারটি মুড়ি, বাতাসা আর কলা পেল, খালি শেষ টুকু চেপে গেল।
রাজার ঘরে ছেলে হল, জোড়া ছেলে তবে চোখ পাকানোর ফলে আসল রানীরও ছেলে হল আর নতুন মেয়েটার ছেলের একটু আগেই জন্মালো সে। রানীর ছেলে টুকটুকে ফরসা লাল আপেন যেন, আর মেয়েটার ছেলের রাজার মত মুখের গড়ন তবে রঙটা কালো। নতুন মেয়েটা ছেলেকে কোলে তুলে চোয়াল শক্ত করল। রাজা এলেন প্রহর পেরিয়ে ছোট ছেলেকে দেখতে, দেখে আশীর্বাদ করে চলে গেলেন। কিছুদিন পর নতুন মেয়ের বাপের বাড়ির কিছু লোকেরা রাজ্যে এল, তাদের কারোর কান কুলর মত, কারো চোখ ভাটার মত, কথা বলে চেঁচিয়ে রাজার পাত্র মিত্র তফাৎ গেল।
এদিকে নতুন মেয়েটা একদিন কথা তুলল, সে আসার পরেই রাজা পুত্রমুখ দেখেছেন, তাকে আর রানীর মত করে ফেলে রাখা যাবেনা। নতুন মেয়েরভাইয়ের চেহারা শালগাছের মত, রাজার মুত্রবেগ এল, রাজা রাজি হলেন। রাজ্যে রোজ রাতে কারা যেন খুব জোরে জোরে ফিসফাসে কথা বলে, হাওয়া থম মেরে থাকে, সকালে ঘোড়াশালে একটা ঘোড়া কম পড়ে, কোণে একদলা রক্ত দেখতে পায় সহিস। হাওয়ায় ভুড়ভুড়ি কাটে কিছু কথা, রাজবৈদ্যর ডাক পড়ে রাজবাড়িতে, বৈদ্য জানান রাজার নাড়ি চঞ্চল, ঘৃতকুমারীর রস মাথায় মেখে তিন দিন ফলাহারের নিদান দিয়ে যান। রাতে ফিসফাস বাড়তে থাকে, রাখালের নধর গরুটা খোয়া যায় একদিন, সেদিন রাজদরবার বন্ধ ছিল অনির্দিষ্ট কারণে।
এদিকে সময় গড়িয়ে যায় জ্যোতিষী হিসাব করেন, বৃহস্পতি তুঙ্গী হয়ে কর্কটে আর রাহু মকরে অবস্থান করছে এদিকে শনি মঙ্গল একসাথে রবির ঘরে থাকতে শুরু করেছে। সেই রাতে জ্যোতিষীর ঘুম ভাঙল স্পষ্ট ডাকে, ‘ওঠো হে, সময় তো হয়ে এল’। জ্যোতিষী ধরমরিয়ে উঠে দেখে সেই অঙ্ক কষা বিড়ালটা মুখে একটা ফিচেল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যোতিষী বলে,’আমার যে চারকুড়ি আয়ু লেখা আছে, সবে তো তিন কাল গেছে তার, কি হবে আমার?’। বিড়াল বলে, ‘মোলো যা, আয়ু নিতে কে এসেছে, শুধু তোমায় নিয়ে যাব, লাগবে তোমায় পরে, গুনে এক কুড়ি সাল কড়ে’। বুড়ো তার পুঁথি টুথি যা ছিল গামছায় বেঁধে বিড়ালের পিছু নিল। বিড়াল বলল, ‘ঘর থেকে বেরিয়ে চোখ আর খুলবে না, যতক্ষণ না বলছি’। বুড়ো চোখ বুজে নিল, চোখ খুলে দেখে এক পাহাড়ের উপর সে আর বিড়াল দাঁড়িয়ে, ভোর হব হব করছে, চারিদিকে একটু শীত শীত ভাব, দূরে একটা সাদা ঘোড়া হলুদ ঘাস চিবোচ্ছে। বেড়ালটা বললে, ‘ঠান্ডা লাগছে বুঝি? আচ্ছা আমি গরম কাপড় পাঠিয়ে দেব, এই নাও ডিম দুখানা রাখো, ঘোড়ার ডিম, আর ঐ পাহাড়ের গুহায় থাকবে, ঘরে সবসময় আগুন জ্বেলে রেখো একটু’। বুড়ো হাঁ করে রইল ডিম দুখানা হাতে নিয়ে। বিড়াল বলল, অত অবাক হওয়ার কিছু হয়নি, ঘোড়ার ডিম জীবনে দেখনি তো কি হয়েছে? পক্ষীরাজ ঘোড়া কখনও দেখেছ? আবার দেখা হবে সময় হলে’, বলে তিন লাফে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসল, ঘোড়া অমনি বিশ গজ পাখনা মেলে উড়ে গেল। বুড়োর অবাক হওয়া কমার আগেই শুনতে পেল বিড়ালের গলা, ‘বিশ বছর পর তোমার কাছে আসবে নীলকমল, সে পক্ষীরাজ ঘোড়া চাইতে আসবে’।
     

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...