Friday, December 28, 2018

বিধিগত সতর্কীকরণ এবং যৎকিঞ্চিত...



কাল মেট্রোতে আগুন লেগে গেছিল।
আমি আমার বাইকটা বিক্রি করে দিয়েছি।
আপাত ভাবে উপরের লাইন দুটোর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু উহারা গভীরভাবে সম্পর্কিত।
কাল একটা রাসবিহারী আসার বাস, দেশপ্রিয় পার্কের মোড়ে নামিয়ে দিল, সামনে আর যাওয়া যাচ্ছেনা। রাসবিহারী অবধি এসে দেখলাম, বাসে যাওয়ার মত জায়গা নেই, মেট্রো অনির্দিষ্ট, অটো হেককারি দেখাচ্ছে। আমি দুবার ফুচকা খাওয়ার চেষ্টা করে দেখলাম, মোটা মহিলারা তাদের রোগা বরদের দাঁড় করিয়ে রেখে নিজেদের জন্য নুন, টক, গন্ধরাজের অনুপান নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন। পরেরবার সেই বরদের ফুচকা কতটা পানসে হলে ফুচকা শুধু মহিলারাই খেতে পারেন এ বোধটা যাতে পাকা হয় তারা তার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন। আমি হাঁটা লাগলাম।
চারুমার্কেটে এসে পিপিনের সামনে একটু চাউমিন আর 'বুড়ো'র সাথে দেখা। তারপরেই এ বছরের আমার সেরা ঘটনার সাথে সাক্ষাৎ। পিপিনের কাছেই বুড়োর একটা দোকান আছে, বাঙালীরা বলে ট্যাটু পার্লার, তার পাল্লায় এ বছরের সেরা ঘটনা আমার সামনে মূর্তমান হল।
দরজায় লেখা ছিল, " NO STUPID PEOPLE BEYOND THIS POINT".
আমি দেখে হেবী আনন্দ পেয়েছি তার কারণ, কোথাও তো এই সিরিয়াল খোর, বাজার বিলাসী, বাজে সিনেমা প্রেমী বাঙালী তথা ম্যাঙ্গো পিপলের মুখে কেউ জুতোর বাড়িটা মারল। বুঝল কিনা প্রশ্ন করবেন না।
পাবলিক সেয়ানা মদন, জিরো যেই শুনল ঝুলে গেছে, অমনি রসগোল্লা চাটতে লেগেছে, যদি না হত, কেউ যেত! আমি আগের সপ্তাহে একটা গান শুনে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেটা শাহরুখ খানের সম্মন্ধে ছিল, জিরো সিনেমা নিয়ে নয়। শুধু লেখার শেষে একজন ভদ্রলোকের আর একজনের প্রতি যা করণীয় তাই করেছি। জিরোর ভাল হোক কামনা করেছি। এবার সবাই দেখছি মনে মনে ভাবছে, দেখেছিস ক্যামন জিরোটা ফ্লপ করল, সায়কের তো পুটকি জ্যাম তাহলে, কোঁত পেরেও বেরোচ্ছে না। এরকম হয়নি, আমার সকালে বিড়িও লাগেনা এমনি হয় (ভগবানের আশীর্বাদে। কেউ নজর দেবেন না)।
বুড়োর দোকানে নির্বোধেরা ঢোকে কিনা, ঢুকলে নিজেদের বুদ্ধিহীন কোটায় ছাড় চায় কিনা, সে ছাড় বুড়ো দেয় কিনা ইত্যাদি জানা হয়নি। বুদ্ধি কি? বুদ্ধি থাকলে কি হয়? ইত্যাদি প্রশ্ন ইদানীং সিলেবাসের বাইরে, প্রশ্ন করলেই ভুল প্রশ্নের দায়ে লোকে ফুল নম্বর পেয়ে যাচ্ছে।
শেষে একটা প্রাপ্তি যোগও হল আমার, সেসব দেব ভোগ্য জিনিস, সবুজ রঙের হালকা ভেজা ভেজা গঞ্জিকা। খাবার পর বাইকে চড়ে আমি ফুল 'সিংহম'। তাই ঠিক করেছি আমি সিম্বা দেখতে যাব।
বুড়ো, সম্ভবত অগাধ বিশ্বাসে আমাকে ওর দোকানে ঢুকিয়েছিল, আমি সেই নির্দিষ্ট বিন্দু অতিক্রম করতে পারি। এবার আপনারা ভাবুন।

Thursday, September 27, 2018

মন খারাপের রাতে


এক দিন সকালে উঠে পেঁজা মেঘেদের ভেসে যেতে দেখেও আনন্দের মন কেমন করে। সুখ আর দুঃখ যমজ ভাইয়ের মত। এই হয়ত একটা বই তুলে গন্ধ নিলুম, মনটা দারুন ভাল হয়ে গেল, দু পাতা পড়ে মনে হল আমি কেন অমুক হলাম না, আমি কেন সুর বুঝিনা, আমি তো এলিয়টের সাথে ভেজা বিকেল কাটাইনি, আমি সংস্কৃত টা শিখতে পারিনি, ব্যস মনখারাপ।
এগুলো অনেক স্থূল কারণ মশাই, এগুলো আসা যাওয়া করে, কিছু কারণ আবার গেড়ে বসে থাকে যেতে চায়না মোটে। যেমন ধরুন এক রাতে ফেসবুকে ভাবলাম কোনো এক সুন্দরীকে কবিতা শোনাবো (আমার নিজেকে এভাবেই উদ্বুদ্ধ করতে হয়), কিন্তু সে এলোনা, মানে কবিতা। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে টুকি দিতে থাকল, এরকম সময় বেবাক মন খারাপ হয়।
এরকম মাঝে মাঝে হয় আমার, কখনও সামলে নিই আর খুব ঝামেলা হলে ঘুমিয়ে পড়ি। এই দেখুন না একটা রূপকথার উপন্যাস লিখব বলে খুব হেঁইও বলে লেগেছি। ভেবে রেখেছি নায়কের একটা প্রেম হবে, ছোটদের মত নয় বড়দের মত। এযাবৎ রূপকথায় যা বলা যেত বলে আমি মনে করেছি কিন্তু যা বলা হয়নি তা আমি বলব থুড়ি লিখব ভেবেছি। 
ঐ অবধিই রোজ রাতে বসি ল্যাপটপে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের সাদা পাতা সাদাই থাকে। এ এক অদ্ভুত অবস্থা।
সেদিনও ঐ একই অবস্থায় ছিলাম, ঘুম আসব আসব করছিল, লেখা আসছিল না, হঠাৎ শুনলাম একটা অদ্ভুত গলা বলে উঠল, "তা দাওনা হে শঙ্খমালার সাথে লালকমল এর বিয়েটা দিয়ে দাওনা"। গলাটা অঞ্জন দত্তের গলার সাথে একটা স্যাক্সোফোনের আওয়াজ মিশেল দিলে যা হয় তাই। অবাক কাকে বলে! যে প্রাণীটা দেখলাম তার বিবরণে পরে আসছি। সানাইয়ের সুরের সাথে যদি লাবণী সরকারের গলা মিক্সিতে ঘন্ট পাকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে যা দাঁড়াবে, সেই গলার এক মহিলা স্বর সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, "কেন কেন, লালকমল কেন? নীলুর সাথে শঙ্খর বিয়ে হবে"। 
-
যা বোঝনা তা নিয়ে কথা বলোনা ব্যাঙ্গমী, নীলু ওরকম একটা স্টাড, ওর সাথে যাবে হল কাঞ্চনমালা।
চোখের সামনে, শ্রাবন্তী আর কল্পনার সুপ্রিয়াদেবী ভেসে উঠলেন। চোখ ফেরাতেই দেখি লোকটা প্রায় নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে বলছে, "সিনেমাটা তো হলনা। এবার এটা কর, যদি পার। প্রায় তিন খানা কম্পাঙ্কের স্তর পেরিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমাদের, আর আমরাই শেষ লটের শেষ কাপল এর পরে আর ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী ম্যানুফ্যাকচারর্ড হয়নি"।
    ভাবছিলাম বলি, তা আপনারা যদি একটু চেষ্টা চরিত্তির করতেন তাহলে কি এক আধটা... ভাবনা পুরো শেষ করার আগে একটা অন্য গলা পেলাম, - "নিজের কথা গুলোই বলে যাবে? আমিও অনেক দূর থেকে এসেছি"- কাঁসরে যদি ফাঁপা কাঠি দিয়ে মারা হয় তাহলে যে শব্দ বেরোয় তার সাথে কৌশিক গাঙ্গুলীর গলা মেশাতে হবে। সে বলল, “আমি নিজেই পরিচয় দিচ্ছি। আমি হলুম ভূশণ্ডী, আদি বায়স কুলচূড়োমণি, দন্ডবায়স
- “
হু:, দাঁড় কাক! আরে বাবা পাখি হিসাবে তুমি আমার নখের যুগ্যিও নও ব্যাঙ্গমা একটা বিকৃত মুখ করে ঝাঁঝিয়ে বলে উঠল।
-“কিন্তু ঐ ব্যাপারটা শুধু বাদ দিলে, ঐতিহাসিক বল, কিংবদন্তি বল, সাহিত্য মর্যাদা বল, আমি কম নই, বরং আমার রেঞ্জটা একটু বেশি”, ভুশন্ডীর মিচকে জবাব।
একটু দমে গিয়ে ব্যাঙ্গমা বলল, - “সে দক্ষিণারঞ্জন ছাড়া আর কেউ সাহস করল না, ত্রৈলোক্যবাবুও চাইলে পারতেন কিন্তু করলেন না...”
-
তাই এই ছেলেটাকে ধরলে?
-
আরে বাবা, একটা জিনিস তো বুঝতে হবে আমি কিছু করিনি ও নিজেই চেয়েছে, নাহলে এমনি এমনি...
-কে জানে বাবা এমন কুচুটে লোকের এখানে কি দরকার কে জানে, কথা হচ্ছিল শঙ্খমালা নিয়ে...”, গজগজ করতে করতে ফুট কাটল ব্যাঙ্গমী।
    এতে দেখলাম একটু চোখ পিটপিট করে ভুশন্ডী খানিকক্ষণ থমকে গেল, যেন একথার উত্তর আর সে দিতে পারবেনা, তারপর একটু সাম্লে নিয়ে বলল,ও যেটা বলতে আসা এখানে। আসার পথে দেখলুম কঙ্কাবতী বনের পথে আসছে, তা বলছিলাম এমনি সে ডাগর হয়েছে, তারপর তোমরা যখন নীলকমল এর জন্য পাত্রী খুঁজছ...”
“না, না” করে ব্যাঙ্গমা এক চিৎকার করে উঠল, “আরে বাবা টাইম আর স্পেস নিয়ে মশকরা করিসনা, ভুশন্ডী, গোটা প্লটটার একটা জগাখিচুড়ি পাকিয়ে যাবে”।
-“কেন এরকম কি হয়না?” –একটা মিহি গলা যেন ফুট কাটল পাশ থেকেএকটা নেড়া মাথা, গলাবন্ধ জরির পাঞ্জাবী আর চোস্ত পরা একটা লোক, মুখে একরাশ লজ্জা মেশানো ভাব আর হাতে কিছু কাগজ নিয়ে লোকটা বলল, “আমি তো হামেশাই এরকম মিল দেখতে পাচ্ছি। এই ধর খুঁজছিলাম একটা লালমুখো হুমদো বেড়াল কে, হঠাৎ এখানে এসে হাজির হলাম। তা একটা কবিতা শুনবে, কবিতা...”, বলে কারুর তোয়াক্কা না করে একটা পাকানো কাগজ খুলে পড়তে আরম্ভ করে দিল,
“লাল গাছে নীল ফুল
 সোঁদা সোঁদা গন্ধ,
 কি যে হয়, কোথা যাই
 মনে লাগে ধন্ধ...
তারপর...তারপর...” বলে সে খুব খুঁজতে লাগল কাগজটায় তারপর কিছু খুঁজে না পেয়ে একটা বোকার মত হেসে বলল, “আজকাল চার লাইন করে লিখছি”। কথাটা বলে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচাতে লাগল, কবিতার প্রশংসা পাওয়ার আশায়।
ব্যাঙ্গমা প্রচণ্ড এক ভুরু কুঁচকে ভূশন্ডীকে বলল, “কাকেশ্বর, তুমি আবার এদের ঢোকালে?”
ব্যাঙ্গমী সঙ্গে সঙ্গে নাকি কেঁদে বলে, “তাহলে আমাদের নীলুটার কি হবে গো, রাক্ষসী রানী যদি ওকে কাঠালের বিচি বানিয়ে রাখে?”
-“আঃ মেলা বকোনা তো এখন, দেখতে পাচ্ছ ইনসেপশন হচ্ছে”, বলেই আবার ভূশন্ডীকে বলল,  কি, কী হল কাকেশ্বর?
ভূশন্ডী দেখলাম তাতে খুব মুখভার করে বলল, “না না, খুড়ো, ওই নামে এখন আর আমায় ডাকলে চলবে না। আমি আর ঐ হিসাবের ব্যবসা করিও না আর হিসেব রাখিও না। এখন আমি যাকে বাংলায় বলে, স্পিরিচুয়াল মোটিভেটর”
-ইল্লি আরকি! তা পাখিদের আর কাজ কি, টপ ভিউটা কি এমনি এমনি দিয়েছে? আর তাছাড়া গরুর আর জটায়ু ছাড়া কোন পাখীকে তুমি অ্যাকশন করতে শুনেছ শুনি?
দুজনের কথা চলছিল, হঠাৎ মাঝখানে সেই সরু গলা ব্যাঙ্গমী কে বলল, “তা বলছিলাম কি, আপনি আমার একটা কবিতা শুনবেন?”।
ব্যাঙ্গমী তো একলাফ দিয়ে উঠে বলল, “আ মোলো যা! কি অলক্ষুণে কথা বলে শোনো”
-“আহা, একবার শুনেই দেখুন না, কতদিন কেউ ভুল করে আসে না এদিকে, আর ব্যাকরণ শিং ও একেবারে বেপাত্তা। এটা একেবারে নতুন...
 ‘চেপেচুপে একখানা আঁক কষ মাথাতে,
 কে বা বড় সিংগি না গজরাজ বনেতে?
 হিসাব নিকাশ যদি মিলে যায় মনেতে
 কি আর করা যাবে তালি মারো দু-হাতে’,”।
বলে নিজেই একেবারে খুব আহ্লাদে গদগদ হয়ে উঠল।
ব্যাঙ্গমা আরো ক্ষেপে গেল, “কাকেশ্বর, এটা কি হচ্ছে?”
কাকেশ্বরের অম্লান বদনে জবাব, “কি আর হবে? হিজিবিজবিজ এর ইচ্ছা থাকলেও কিছু হবে না, যদিও আইন বেরিয়ে গেছে, আর আপনিও কিস্যু করতে পারবেন না। তবে আর একবার ও নামে ডাকলে কিন্তু লোক লেলিয়ে দেব বলে রাখছি।
আমাকে আইনের ভয় দেখাচ্ছিস? জানিস আমার ডিরেক্ট ব্লাড লাইনে কার কার নাম আছে? আর লোকের ভয় দেখাচ্ছিস? জানিস একটা ফোন করলে নীলু চলে আসবে তারপর রক্তগঙ্গা বইবে”।
কাকেশ্বর ঘন ঘন মাথা নেড়ে বলল, “সে যার রক্তে যা থাকে থাকুক কিন্তু ও নামে ডাকলে আমি মোটেই খেলব না”
-   “কাকেশ্বর! কাকেশ্বর! কাকেশ্বর!”
-   “উবু! একষট্টি, বাষট্টি, তেষট্টি...”
কাকেশ্বর এরকম বলতে বলতেই দুটো টেকো লোক মাটি ফুঁড়ে যেন উদয় হল।
প্রায় একরকম দেখতে লোকদুটোকে কার্টুনের মত, লম্বা দাঁড়ি হাঁটু অবধি ছুঁয়েছে, একজনের কপালের পরেই একগাছি বেগুনী চুল আর একজনের সেটাও নেই, বোজার সুবিধের জন্য বোধহয়। দুজনেরই পড়নে হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি।
একদম টেকোটা বলল, কতবার না বলেছি, দুপুরবেলা অঙ্ক কষতে ডাকবে না, পান্তাভাতে পিঁয়াজ মেখে খেয়ে আমরা দুজন ঘুমোই।
কাকেশ্বর অপ্রস্তুত হয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “কতবার বলেছি সে ব্যবসা আর করিনা আমরা, বুধো, গাঁট্টা মার উধোটাকে”।
যাকে বুধো বলে ডাকা হল, সে বলল, “সে তুমি যাই বল, এখনও তিন টাকা চোদ্দ আনা ছয় নয়া পয়সার হিসাব বাকী আছে, সেটা না দিলে কাজ করব না”।
বেগতিক দেখে কাকেশ্বর গলা নামিয়ে বলল, “আরে দেবো দেবো খাতায় সব লেখা আছে না। কিন্তু এ লোকটা যে তোদের টেকো বলল সেটার কি হবে?”
একথা শুনেই দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে, “আমাদের টেকো বলেছে রে!” বলে সুর করে ডেকে উঠল, তারপর রাগে মাটিতে পা ঘষতে লাগল।
এদিকে ব্যাঙ্গমা ঘাবড়ে গিয়ে, “এই মারবি নাকি? এই... নীলকমল এসে পড়বে কিন্তু...খবরদার বলছি...”, এসব বলতে লাগল। আর ব্যাঙ্গমী, “আমার কি হবে গো”, বলে কাঁদতে আরম্ভ করেছে। হিজিবিজবিজ এসব দেখে, “আমার কি হাসি পাচ্ছে গো”, বলে গা দুলিয়ে হাসতে লাগল। কাকেশ্বর শুধু, “লেগে যা, নারদ নারদ”, বলতেই, উধো আর বুধো তেড়ে গেল।
মাথাটা ল্যাপটপের উপর ঠোকা লেগে যেতেই, তাকিয়ে দেখলাম সাদা ওয়ার্ডের পাতায় দু লাইন লেখা আছে-
“হিং টিং ছট,
 কাগের বাসায় বগের ডিম,
 তোড়ায় বাঁধা, ঘোড়ার ডিম”।

Friday, August 31, 2018

অন্যান্য হাবিজাবি


আমার ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা স্নানঘর আর দুটো পায়খানা ছিল। একটা পায়খানা স্নানঘর লাগোয়া, তবে দরজা আলাদা, তার অবশ্য কারণ ছিল, দরজা গুলো তলার দিকে ঘুণে খেয়ে গেছিল, নীচু হলে পা দেখা যেত, সেই দেখে কে গেছে বুঝে বেগ চাপার একটা ব্যাপার ছিল। এবার আমার ঠাকুর্দার ছিল কোষ্ঠ সমস্যা, তিনি গেলে কম করে আধঘন্টা, বেশি হলে তিরিশ মিনিট। এবার ওঁকে কেউ ডাকতেও পারেনা মানে বিশেষত মহিলারা, তাঁর ভাইয়েরা আর আমার বাবাও অনেক কষ্টে ডাকতেন, সে এক ব্যাপার হত। আর একটা পায়খানা ছিল বাইরের দিকে। সকালের দিকে ছেলেদের বাইরেরটায় যাওয়ার নিয়ম ছিল, ওখানে ইয়ে করে কুয়ো পাড়ে শৌচকর্ম তারপর ঘরে ফেরা। আমার ঠাকুরদা একমাত্র বাইরেরটায় যেতেন না শারিরীক কারণে। এবার বাইরে সে সময় মানে তখন আমার 5/6 বছর বয়স, সেই তখন মহাভারত সিরিয়াল শেষ হয়েছে সবে বা চলছে হয়ত শেষের দিকে, তখন থেকেই পায়খানা আমার বড় প্রিয় জায়গা। কেউ বলার নেই কিছু, কেউ শোনার নেই, আপন মনে নিজেকে ভীম, হনুমান, রাম যা খুশি ভাবো। ছোটবেলায় আমি প্রথম প্রথম জোরে জোরে ভাবতাম, মানে বলে বলে, পরে একদিন বাবা শুনে ফেলেছিলেন তারপর মনে মনে চেপে ভাবি।
সে সময় সকালে বাহ্যে যেতে হলে আমায় আদিম পোশাকে যেতে হত কারণ গামছায় ছোঁয়া লেগে যেতে পারে। 
আমি চিরকাল শুনে এলাম পুরুষ মানুষ আবার লজ্জা কি ? আমার যে সম্পূর্ণ লজ্জা লাগত তা নয় আবার একটা অস্বস্তিও হত। তখন যেসব রসিকতা হত সেসব আজ হলে টিভি চ্যানেল ভেঙে পড়ত, মোমবাতি মিছিল হত, বিদ্যজন ক্ষেদোক্তি করত, বিশাল হাঙ্গামা একটা হত নিশ্চিত। এখন নেশন জানতে চায়, তখন সেসব কৌতূহল ছিলনা। আমি মুশকিলে পড়তাম রসিকতাটার গুরুত্ব না বুঝে, অথচ আমি যে আকর্ষণের কারণ স্বরূপ এটা বুঝতে পারতাম, ওতেই একটা আনন্দ। জানিনা, ফ্রয়েড তখন থেকেই সুপ্ত ছিল নিশ্চয়।
এবার রাতের বেলায় ছিল অন্যগল্প। রাতে আমার ভীষণ ভয় ছিল, বাথরুমে সে সময় জ্বলত একটা বিচ্ছিরি হলুদ আলো, আর সে সময়কার বাথরুম দিনে রাতে পুরো আলাদা জিনিস। আমি দরজা বন্ধ করতে পারতাম না, আর আমার দুই ঠাকুমার কাউকে না কাউকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পা দেখাতে হত। মানে কেউ আছে আমি একা নই। আমার সেজো ঠাকুমা আমি তাকে 'সমা' বলে ডাকতাম, তিনিই এই কাজ বেশি করতেন। আমার মা জীবনে এসবে পাত্তা দেননি, আর সমা প্রত্যেকবার বলত, 'হাগা পাইলে বাঘের ভয় লাগেনা'। আমি কিকরে বোঝাব বাঘ আর ভুতে বিস্তর তফাৎ, বাঘেদেরও মানবিক কাজ কর্ম করতে হয় একটু সবুর করলেও করতে পারে, কিন্তু ভূতেদের তো সেসবের বালাইই নেই।
আজকাল সেরকম কল্পনা আর আসেনা।

Thursday, August 30, 2018

নামকরণ ও অন্যান্য হাবিজাবি

সদগুরু কে চেনেন তো জগগি বাসুদেব (মোবাইলে বানানটা ঠিক এলোনা)। তিনি একদিন বলছিলেন, মনের অবস্থা চার প্রকার, ক)জাগ্রত, খ) স্বপ্নাবস্থা, গ)সুষুপ্ত এবং ঘ)চেতন। এই চার অবস্থার কথা ভারতীয় যৌগিক বিজ্ঞানে বলা হয়। এই অবস্থার ব্যাখ্যান আমার লেখার বিষয় নয় আমি বুঝলেও ব্যাখ্যা করার মত ধী অর্জন করিনি।
একটু এধার ওধার যেতে পারি নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।
মানুষ যে বুদ্ধির বড়াই করে, সেটা দেখলাম খুবই মামুলি জিনিস। মানে ধরুন ফুটবল মাঠে ল্যাং মারা, আপনাকে মোটা বলায় তার নিম গুষ্টি উদ্ধার করা, আপনার প্রেমিকার দিকে তাকালে তাকে শক্তি কাপুরের মত কেলানো এসব বুদ্ধির প্রকাশ। অবমান হয়ে গেল না? আসলে এই গুলোই আমরা নিত্যদিন করে থাকি আর যে ভালো পারে তাকে মরদের বাচ্চা আখ্যায়িত করি। এগুলো কিন্তু কুকুরের বাচ্চারাও ভালো পারে। আপনার আমার ভাষাজ্ঞান কম তাই বুঝতে পারিনা। 
নাঃ গুলিয়ে ফেলছি মশাই। আসলে সমস্যা হয়েছে একটা নাম চাই। নাম বড় সমস্যার জিনিস, আমি আবার নাম পছন্দ না হলে বিষয়ে ঢুকতে পারিনা। নামকরণের সার্থকতা চাই। আমার বহুবার ইচ্ছা করেছে স্কুলের পরীক্ষায় যখন প্রশ্ন এসেছে, 'ওরা কাজ করে' কবিতার নামকরণের তাৎপর্য কি? ওরা কাজ করে করে, তো আমি কি করব? 
আমার এক বামপন্থী বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম ঐ একবারই রবিঠাকুর বোধহয় সাম্যবাদী কবিতা লিখেছিলেন। 
দেখুন নাম ভালো না হলে এখন এই অনলাইন মার্কেটের যুগে বউনি ভালো হবেনা। এই নিয়ে নিত্যদিন কত লোক জ্ঞান দিচ্ছে, আবার একটু গোপন সুড়সুড়ি বেল্টের নীচের ইঙ্গিত থাকলে কন্টেন্টের ভাই হয়েছে, সাড়ে তিনশো লাইক। 
আমি ভেবেছি গপ্পো বলব। শুনুন একটা...
আমি যখন হব হব করছি, বি আর চোপড়াও সেই সময় মহাভারত পেটে নিয়ে ঘুরতেন। তা ব্রহ্মাণ্ডের ষড়যন্ত্র কি না জানিনা আমার সিপিএম বাবা আমার নাম রাখলেন সায়ক, যার মানে তীর। সায়ক কথাটা শিবের মন্ত্রে বহুবার আছে। তবে হ্যাঁ সিপিএমের লোকেরা নামকরণ খারাপ করত না। কিন্তু কপাল দেখুন আমি তো গদার মত হলাম। সেই থেকে ভীম আর হনুমান আমার ফেবারিট। নামকরণের ব্যর্থতাতেই মনে হয় বাবা আমার উপর আমরণ খাপ্পা থেকে গেলেন। এই জন্য বলে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
যাক যা বলার জন্য গত রাত থেকে পেট ভার ছিল খানিকটা নেমেছে। 
কথা হচ্ছে একটা ভালো নাম সাজেশচন করুন তো, ইউ টিউব চ্যানেলের জন্য। তার জন্যই এত ভনিতা। শর্ত সব লেখার মধ্যেই আছে। বুদ্ধি খাটালে পাবেন না, আর একটু উর্দ্ধে উঠতে হবে। পারবেন চেষ্টায় কি না হয়!

Tuesday, August 28, 2018

ভয়ের কথা


ভয় হয় মশাই বেমক্কা ভয় হয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমি ট্রেনে যাতায়াতের সময় লিখি। তাতে গোটা তিনেক গল্প আর খান দশেক হিজিবিজি হয়েছে, সেগুলো আমি প্রবন্ধ বলে চালাই এছাড়াও দু তিনটে গল্পের বই শেষ করেছি, তা যাক।
সেই যে লিখেছিলাম যখন খুব কষ্ট হয় তখন আমার দুঃখু হয়। সেই সময় ট্রেনে উঠলেই কিছু চরিত্ররা আমার কনুই খামচে, কলার টেনে, কখনও নিতম্বের সিকি ভাগ ঠেকাতে দিয়ে আমার সামনে হাজির হয় এবং লিখিয়েও নেয়।
তা কথা হচ্ছে কাল বাড়িতে লিখতে বসে দেখলুম তারা এলোনা। এলোনা মানে ডাক খোঁজ, সাধ্যি সাধনা, খিস্তি খেউর এলোই না। 
আজ এই এখন আবার ট্রেনে তারা হাসিমুখে। কি আপদ বলুন তো। কি হবে আমার!

Sunday, August 12, 2018

বরাহনন্দন

উপরের ভালো শব্দটার একটা চলতি বাংলা নাম আছে ‘শুয়োরের বাচ্চা’! গালাগাল হিসাবে নেবেন না, এটা প্রায় লব্জ, এক্সট্রা অর্ডিনারি বোঝাতেও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে কলকাতায় থাকতে রাস্তাঘাটে নির্বোধ লোকেদের উদ্দেশ্যে কখনও কখনও ব্যবহার করে যে একটা আনন্দ পাওয়া যেত মুম্বাই এসে সেটা পাওয়া যাচ্ছেনা মোটেই। আমি তো আর থেকে থেকে আমজাদ খান হয়ে যেতে পারবো না। এই সেদিন ট্রেনের মধ্যে এক আধদামড়া বুড়ো মাথার উপর একটা ইয়াব্বড় ব্যাগ ফেলে দিল, খুব জোরে ওর বাবাকে শুয়োর বলে ডেকে উঠলাম প্রতিবর্ত্ত ক্রিয়ায়, কি বলব মাইরি নিউটন সাহেব ফেল মেরে গেলেন, সমান তো দূরের কথা কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই, উল্টে সরি চেয়ে বসলো!
যে যাই বলুক বাঙালী সৃষ্টিশীল জাতি, আর কোথাও আপনি গালাগালির উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ দেখেছেন? মঙ্গলকাব্যে ‘গজভাতারী’ বলে খেউর করা হয়েছে, কল্পনা না থাকলে সম্ভব!  আমার তামাম ভাষার কিছুই জানা নেই তবু রাস্তাঘাটে লোকেদের শুনলে তো বোঝা যায় খানিকটা। তারপর দেখুন এই যে বরাহনন্দন এর আবার ‘গুড, বেটার, বেস্ট’ আছে মানে বিশেষণের প্রয়োগে তর, তম গুনের প্রকাশ আরকি। উদাহরণ দি, এমনি শুয়োরের বাচ্চা, খাঁটি শুয়োরের বাচ্চা আর হল পাক্কা শুয়োরের বাচ্চা। মনে মনে ভাবুন দেখবেন এই সামান্য বিশেষণ প্রয়োগে কেমন চোখের সামনে সেই ব্যক্তির ফ্যামিলি ট্রি তৈরী হয়ে যাচ্ছে। বাঙালীর গালাগালি নিয়ে গবেষণা করা উচিৎ।
ইদানীং বাঙালী ভালো ভালো গালাগাল যাকে খিস্তি বলে সেসব দিতে চায়না। ইংরাজীতে একটা শব্দ আছে ওটা অব্যয় পদের মত, নিজের, বাপের, যজ্ঞেশ্বরের শ্বশুরের যার উদ্দেশ্যে খুশি, এবং যেকোনো ইমোশনে ব্যবহার করা যায় আর শুনলেও আলাদা করে কিছু মনে হয় বলেতো প্রত্যয় হয়না। আগে বাঙালী অনামুখো, আটকুঁড়ের ব্যাটা এসব গালাগাল পাড়ত। একবার মনে মনে কল্পনা করুন (অন্য ভাবে করা যায়ও না) যাকে আটকুঁড়ের ব্যাটা বলা হচ্ছে তাকে কোন লেভেলে অপমান করা হচ্ছে, অথচ এগুলো কিন্তু নিরামিষ গালাগাল কেউ কিচ্ছু মাইন্ড করত না। তারপর ‘হারামজাদা’, এটাও কিন্তু বাঙালীর কাছে নিরামিষ গালাগাল কিন্তু আদতে এর মানে খুব গভীরে। বাঙালী আলু থেকে গালাগাল যা যা সহজপাচ্য এবং সদ্ব্যবহার যোগ্য তাকেই নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।
দেখুন গালাগাল যেকোনো জাতিরই একটা সামাজিক মানদন্ড, যেমন ধরুন মহাভারতের সময়ও গালাগাল দেওয়া হত, কর্ণ ভীমকে মাকুন্দ বলে ক্ষেপাত, বনবাসের সময় দুর্যোধন দুঃশাসনেরা ভীমকে ‘গরু’ বলে অপমান করেছে কিন্তু সমোস্কিতো ভাষায় কতটা খুলত সেসব বা আদৌ অর্জিনাল গালাগাল গুলো আন-এডিটেড ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা কে জানে! এই ধরুন ভীম, যখন কীচক বধ করেছিল, বা দুঃশাসনের রক্তপান, সেসময়ের যে বর্ননা আছে ও কি বাংলায় না লিখলে কোনো রস আসে? একটু ক্ষমা ঘেন্না করে নেবেন শেষ করার আগে একটু বেগ এসে গেল।
ভীম সেদিন এক ঘটি জল না মেশানো মাধ্বী খেয়ে নিয়েছে, চোখ টোখ একেবারে লাল হয়ে আছে, এদিকে সেদিন কর্ণ সেনাপতি হয়েছে দেখে দুঃশাসনের খুব আনন্দ, ভীমকে সামনে পেয়ে খুব বান মারল, ভীম এমনি বান মারামারি খেলছিল গা গরমের জন্য, এর মধ্যে ধাঁ করে দুঃশাসনের বানে ভীম মূর্ছা গেল। তখন আর দুঃশাসনকে দেখে কে! আসলে কড়া মদ খেয়ে একটুও রেস্ট হয়নি ভীমের সেদিন। যাক চটকা ভাঙলো দু মিনিটেই উঠেই আর কোনো বান টান নয় সোজা দশমণি গদাটা বাঁই বাঁই করে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিল দুঃশাসনের রথের দিকে। দুঃশাসন ছিটকে পড়ল দশ হাত দূরে  (এখন থেকে স্লো মোশন, একতা কাপুর স্টাইলে ভাবুন), ভীম গর্জে উঠল, “এবার আমি যাচ্ছি আমার প্রতিজ্ঞা পালন করতে, কারুর হিম্মত থাকলে বাঁচিয়ে নে দুঃশাসনকে”।
একটা তেমন তেমন খিস্তি ছাড়া এই সিনটা জমে বলুন! হুঁ  হুঁ বাওয়া, সেন্সর বোর্ড কি আজকের ফ্যাকড়া! যুগ যুগের ঐতিহ্য। নইলে এমনি এমনি কি গজাননকে ডাকা!

Friday, August 10, 2018

উইকি, আমি আর চোদ্দ বছরের অপেক্ষা...


আমি friends শব্দটায় বিশ্বাসী নই, তাই দিন ক্ষণ পাল্টে গেলেও কিছু হতনা। আমি বন্ধু কি জিনিস বুঝতে বুঝতে ১০বছর পার করে দিয়েছিলাম। তবে একটা ঘটনা মনে পড়ে, একদম ছোটবেলায় নার্সারি ক্লাসে যখন পড়ি তখন সুরজিত বলে আমার এক বন্ধু ছিল, সে আমায় এত ভালবাসত যে আমি জুতোর ফিতে বাঁধতে পারতাম না বলে আমার জুতোর ফিতেও বেঁধে দিত। তারপর ওয়ান বা টু তে ও চলে গেল ওর আসল বাড়ি বিহারের দিকে ছিল, বাংলা বলত খুব খারাপ ভাবে। তারপর ও একবার ক্লাস টুয়েলভ এর পর আর একবার 2012/13 হবে এসেছিল আমি কেন জানিনা ভাল করে কথা বলে উঠতে পারিনি। ও তখনও বোধহয় বছর 6/7 এর সায়ককে খুঁজছিল আমি তখন 26।
এইটুকু ইমোশনাল কাসুন্দি ঘাঁটার দরকার ছিল।
এবার 1996 সাল। এক দিন হঠাৎ শুনলাম স্কুলে এক ছেলে আমায় নাকি তার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে তার মায়ের কাছে বলেছে। আমি মনে মনে তখনও তাকে সে তকমা দিইনি, এখনও না। যাক তার একটা নাম ছিল, সে নিয়ে অনেক অভিযোগ তার তাই তাকে #উইকি বাবু বলেই বলছি। জীবনে চুমু রহস্য আমাকে সেই বুঝিয়েছিল। তখন আমার সেজদাদু আমাকে স্কুলে দিতে যেত, আর উইকি তখন ভীষন লাফাত ঝাঁপাত আমার একদম ভালো লাগত না। ঢুকতে ঢুকতে দেখছি মাঠের কোনাকুনি করে আদিখিলার মত ছুটে আসছে, আমি যত ঢুকে আসছি তত ও এগিয়ে আসছে অথচ আইকে দেখতে পাচ্ছেনা। তখনও সিঁড়ি অবধি পৌঁছতে পারিনি, বলল, বর বউ কিস করে কেন জানিস? আমি এসব শান্ত মাথা ছাড়া শুনতে চাইতাম না, তখন খালি দেখছি আই চলে গেছে কিনা, এদিকে ব্যাখ্যা ও করবেই...'হিট ওঠে বলে কিস করে'। কিসের হিট, কার ওঠে, কেন ওঠে আমি কিছু না বুঝলেও খুব আশাপ্রদ মাথা নেড়ে আমি ওকে নিরস্ত করলাম। কিছুদিন পরেই রিপন শীলের জন্য কি একটা কারণে বিলা একটা কেস খেয়েছিল। আর একবার তো টেন না ইলেভেন মনে নেই আমাদের স্কুল থেকে ইন্টার স্কুল স্পোর্টস হচ্ছে, তাতে মেয়েদের 400 মিটার রেস হচ্ছে এবং বিশেষ কিছু তাতে দ্রষ্টব্য হচ্ছে, আমি দেখে সরে পড়েছি, কিন্তু উইকি কি না জানিয়ে থাকতে পারে?? তাই আমি ভেবে শঙ্কর স্যারের হাত ধরে টেনে দেখাবেই, সেই উন্নত...থাক।
এর বেশি এই ফক্কিকারি এম্রিগার সোদনামোতে আমি লিখতে পারবো না। কূট প্রশ্ন করবেন না, যে কে লিখতে বলেছিল। ঐ যে বললাম উইকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নয়, নিন্দুকের গুহ্যে বাঁশ গুঁজে দিয়ে বলতে পারি, ওরা কি আর14 বছরের অপেক্ষার হিসাবটা বুঝবে! আমিও যে বুঝতে পেরেছি এমন নয়।
বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আমার রিপন শীল। প্যাঁচা উইড়ে গ্যাসে!
এরপর আরেকজনের কথা বলতে গেলে আরেক প্রস্থ লিখতে হয়, তবে ফ্রেন্ডশিপ ডে দু দুটো ষাঁড়ের ভার নিতে পারবে কিনা ভাবছি। বিছের কেরদানিই শেষ হলনা...

মুম্বাইতে দ্বিতীয়বার আসার গল্প আর একটা লোক


এইটা শুরু করতে হবে আমার এক বন্ধুর ডায়লগ দিয়ে। ওর ডায়লগ একেবারে কোটেশন লেভেলের। ঘোর ব্রাহ্মণ আমার সেই বন্ধু বলেছিল, মানে আরেক বন্ধুর উদ্দেশ্যে, "ও ঠিক কালো না, ও হচ্ছে দু মিনিট কালো, তুই যেমন আধ মিনিট মোটা'।
আমি আবার সমে ফিরব।
আমি প্রথম মুম্বাইতে আসি হাওড়া মুম্বাই মেল ট্রেন করে, এদিকে সবাই বলছে দুরন্ত নাকি দুরন্ত, হেবী খাওয়া দাওয়া দেয়। তো প্রথম বার ফিরে দ্বিতীয় বার যাওয়ার সময় দুরন্তই ধরলাম। দেড় বেলায় ৫বার খেতে দেয় আর ট্রেন এ আমার বেশ ভালোই মজা হয়। তো ট্রেন ছিল সকাল 8টা পাঁচ, সেবারে আর কাউকে সঙ্গে নিইনি এমনিই একটু মনটা খারাপ ছিল। তা ট্রেন উঠলাম, সে চলল, একটু পরেই আলাপ হল এক বাঙালী দম্পতির সাথে, দু এক কথার পর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, কি করো তুমি? আমি মিন মিন করে বললাম, এই দু একটা সিরিয়ালে লিখেছি, ব্যাস অমনি মহিলা তার শুটকো মতন একটু ভাব নেওয়া বরকে লাফ দিয়ে উঠে বললেন, "এই শুনছো সিরিয়াল লেখে বলছে, আমি যেগুলো দেখি"। যারা ছোটবেলায়, লালকমল নীলকমল এর ক্যাসেট শুনেছে তারা জানে, সেখানে 'রাক্ষসরা জিজ্ঞাসা করেছে, ঘরে কে জাগে, লালকমল বলে ফেলেছে, লালকমল জাগে, আর খোক্ষসারা বলছে, ওঁরে লালকমল বলছে রে...' আমার সেরকমই মনে হচ্ছিল। এরপর বর লোকটি, গুপী গাইন বাঘা বাইনের নৃপতির কায়দায় একটা হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তা কি কি লিখেছো?' এরকম চলছে হঠাৎ দেখলাম একটি ছেলে সিট খুঁজতে খুঁজতে এসে সাইড লোয়ার বার্থে বসল, তার সামনে আর একজন বসেছিল বেশ হাট্টাকাট্টা গোছের, দুজন কথা বলছে আমি শুনে বুঝলাম স্বাস্থ্যবানটি সিনেমায় স্টান্ট এর কাজ করে, আর নতুনটি পাকানো লোম লোম গোঁফওয়ালা ছেলেটা এডিটিং এর, পরিচয় হল। 
এবার সন্ধ্যের একটু পর দেখি এডিটর ছেলেটি বলছে, সিগারেট খাবে? আমি আগেরবার একটু চাপে পড়েছিলাম বলে ৫টার বেশি সিগারেট সাথে নিইনি, কিন্তু দরজার সামনে গিয়ে দেখি ওখানে খোরেদের হাট, আর তার মাঝে, একটি লম্বা তিন মিনিট কালো, লাল চোখো, রামের গন্ধ মাখানো লোক বসে সকলের পোঁদে লাগছে। * সে একেবারে গায়ে পড়ে চাটা যাকে বলে, মানে কেউ হয়ত বলল, 
-ট্রেন লেট হোগা লাগতা হেয়। 
সে বলল, 
-পহচান তে হ্যায়?
-কিসকো?
-ড্রাইভার কো?
-নেহি তো
-ও ম্যায় সোচা রিস্তেদার হোগা আপকা!
দ্বিতীয় লোকটির প্রস্থান।
এই চাটনদারটিকে দেখে কি জাত বোঝা যায়না, তবে বাঙালী, নাম বলেছিল দেবাশীষ বা হিমাদ্রি কিছু একটা হবে, ভুলে গেছি। পকেট থেকে ছোট্ট একটা নিপ বার করে ঢুকুৎ করে অনেকখানি করে গিলছে তারপর হেল্পারগুলোকে ডেকে এককাপ ইষৎ গরম জল চেয়ে খেয়ে নিচ্ছে, আর বলছে 'সব শালা বোকাচোদা, গাঁড়ে দম নেই, এটা আমার দু নম্বর চলছে, আর একটা খেয়ে শুয়ে পড়ব'। তারপর যা জ্ঞান উরিবাপরে! উনি জানেন E=mc2 এর গুঢ় তাৎপর্য বলবেননা শুধু বাজার নষ্ট হয়ে যাবে বলে। 
এরপর শুরু হল দলে দলে লোকের আসা কিনলের বোতলে মাল মেশানো আর খাওয়া। লোম লোম গোঁফ ওয়ালার কাছেও ছিল, আমি খাইনি, আসলে একটু ঠিকঠাক সঙ্গত না পেলে আমার আবার... তাছাড়া বারণও ছিল, থাক ওসব গুহ্য কথা। পরদিন সকালে কালো লোকটা আর চিনতেও পারেনি।
*কেমন সমে ফিরলুম বলুন।

Thursday, August 2, 2018

লেখার কথা এবং এলো মেলো কিছু



প্রসঙ্গ-১
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা ওয়ান লাইনার স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম যে আমি সব সত্যি বললে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পরে ভেবে দেখলাম বিস্ফোরণ একটা হবেই তবে খবর হবেনা। বিস্ফোরণ-এ যদি খবর হয় তো মজার কিন্তু যদি আমারই হাতে ফোস্কা পড়ে তাহলে আমি গা... হ্যাঁ যা ভাবছেন ঠিক তাই, তবে সুখের কথা আমি ততটা বোকা নই যে আপনি আমায় বোকা বলে চিহ্নিত করতে পারবেন, আবার এখানে একটা মজা আছে যদি আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তার অহংকারে আমাকে বোকা বলে ঠাউরে নেন তাহলে অচিরাৎ এক মোক্ষম ক্ষণে আপনার সে ভ্রম ভেঙে যাবে। আপনি অহংকারী তাই স্বীকার করবেন না হয়ত, তবে বুঝবেন নিশ্চয়ই যে আপনি বুদ্ধিমানও নন আর বিচক্ষণও নন। এরকম সময় আমার হেবী মজা হয়।
প্রসঙ্গ-২
‘রূপ দেখতে তরাস লাগে’- টা লিখতে হবে বলে রোজ সকাল বিকাল একটা উচাটন হচ্ছে, কিন্তু যে কোন লেখা লিখতে হলে একটা সাধন লাগে, সহবাস লাগে, তার সাথে একলা হয়ে যেতে হয়, সে সময়টা পাচ্ছিনা। তাছাড়া সময়ের কিছু ছ্যাঁচড়ামি আছে, সেসব কাটাবার মত পুরুষ এখনও হয়ে উঠতে পারিনি। তবে লিখে ফেলবই।
৩ নম্বরঃ
দেখতে বসলে, লিস্টি মেলালে অনেক লম্বা ফর্দ আছে। অজুহাত আমার বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচির থেকেও লম্বা। এতদিনে লিখে ফেলা উচিৎ ছিল পারিনি, ঐ সেই মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্পের মত, আমার নিজের চিনি খাওয়ার অভ্যাস না কমালে অন্যকে বলি কি করে!
এলো মেলোঃ
বাজে কথা আমি যত শিখেছি, তার সিংহ ভাগ বন্ধুদের থেকে, আমি সত্যি বলছি যখন আমি প্রথম জ্ঞান বৃক্ষের ফল খাই তখন আমি কিচ্ছুটি বুঝতাম না। ক্লাস ফাইভের আগেই এক সন্ধ্যায় খেলার পর সেসব গল্প শুনে বর্ষা রাতের ভুতের গল্পের মত রোমাঞ্চ জেগেছিল, শুধু সামান্য একটু দেহগত পার্থক্য ছিল এই রোমাঞ্চে। তা যাইহোক আমি যখন ফাইভে ফুলের পরাগ মিলন পড়ছি, কিছুই বুঝছিনা সেই সময় একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে দুই-এ দুই-এ চার হয়ে গেল, কে যেন কানে কানে বলে দিয়ে গেল। এরকম আমার অনেক হয়েছে। আমি কত খিস্তির গুঢ় অর্থ নিজে একা একাই বুঝতে পেরে, হাত না পৌঁছানো পিঠে ইয়া চাপড়ে দিয়েছি।
মোদ্দা কথাঃ
দেখুন অঙ্ক পারলেই যে সবাই অঙ্কে ভালো হয় তা নয়, সেরকম অঙ্কে আপনি ভালো হোন বা না হোন সময় তো আপনার জন্য একটা অঙ্ক কষে রেখেছে। এবার তিন রকম গল্প আছে, এক যদি আপনি অঙ্কটা না বোঝেন তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল যা হচ্ছে হবে। দুই, যদি আপনি মিলল কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন তবে দেখতে হবে কবে কোথায় কখন আপনি স্টেপ জাম্প করেছেন বা গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেক্ষেত্রে আবার নতুন পাতা নাও। তিন নম্বরটা জটিল, যদি আপনি কোনভাবে উত্তরটা দেখতে পেয়ে গিয়ে থাকেন, সে অবশ্য প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। এখানে অবশ্য অসম্ভব শব্দের মানে হচ্ছে = অতি সম্ভব। উত্তর পেতে গেলে প্রথমে আপনাকে অঙ্কের আঁতুড় ঘরে ঢুঁ মারতে, সেখানে সংখ্যা, রাশি, নিয়ম-কানুন এদের সাথে বসে একপ্রস্থ আড্ডা মারতে হবে, তারপর তাদের সাথে চলতে চলতে দেখবেন একদিন উত্তরটা আপনার হাতে লিখে দিয়ে কে যেন ঘষে দিয়ে গেছে। কিন্তু ততদিনে আর আপনার অঙ্কে মন নেই। এ এক গেছোদাদাকে ধরার মত প্যাখনা।
পুনঃ
এই সব ব্যাপার নিয়ে ভাববেন না, আবার ভেবে দেখতেও পারেন, কোমরের নিচ থেকে একটা সোনালী রঙের সাপ ক্রমশ মেরুদন্ড বেয়ে উঠে চলেছে, বুকের কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ায় কোনো কোন দিন, তারপর মশলার ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে, সোজা মাথায় ফনা বিস্তার করে, কম মাপ হলে আবার ঘাড়ের কাছ থেকে একদিকে বিস্তার করে তখন একটা ঝামেলা মতন লাগে। বুঝতে পারলে ভালো না বুঝলে এই রকম চলুক...
শেষ কথাঃ
আমার অন্য কারোর জন্য লিখতে ইচ্ছা করছে না, পিরিয়ড।

Monday, July 30, 2018

ত্রিমাত্রিক বন্ধনে


কখনও কোনো এক অন্য ত্রিমাত্রিক বন্ধনে
যদি ছুঁয়ে দি, যদি বিন্দু বিন্দু মিলে যায় অন্য এক জ্যামিতিক আকারে
যদি নীলে মিশে যায় নীল, শব্দের কম্পাঙ্ক খুঁজে ফেরে নষ্ট সাইন কার্ভ
যেখানে সময় শিশিরের মত জমা হয় ডাক বাক্সের খাঁজ বেয়ে,
যেখানে সিঁড়ির ঘরে লুকোলে বাজে নিঝুম স্বপ্নের সুর,
সেখানে যদি খুলে দি তোর বাঁধন, যদি চুঁইয়ে পড়ি তোর ঘাড় চুল ঠোঁট বেয়ে।
তুই না করতে পারবি না, তুই হ্যাঁ করতে পারবি না...
শুনতে পাবিনা তোর নিজের ধুকপুকুনি, বলবোনা আমি কিছু তোকে।
শুধু বয়ে যাবো তোর গাল-গলা-বুক বেয়ে।

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...