Friday, August 31, 2018

অন্যান্য হাবিজাবি


আমার ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা স্নানঘর আর দুটো পায়খানা ছিল। একটা পায়খানা স্নানঘর লাগোয়া, তবে দরজা আলাদা, তার অবশ্য কারণ ছিল, দরজা গুলো তলার দিকে ঘুণে খেয়ে গেছিল, নীচু হলে পা দেখা যেত, সেই দেখে কে গেছে বুঝে বেগ চাপার একটা ব্যাপার ছিল। এবার আমার ঠাকুর্দার ছিল কোষ্ঠ সমস্যা, তিনি গেলে কম করে আধঘন্টা, বেশি হলে তিরিশ মিনিট। এবার ওঁকে কেউ ডাকতেও পারেনা মানে বিশেষত মহিলারা, তাঁর ভাইয়েরা আর আমার বাবাও অনেক কষ্টে ডাকতেন, সে এক ব্যাপার হত। আর একটা পায়খানা ছিল বাইরের দিকে। সকালের দিকে ছেলেদের বাইরেরটায় যাওয়ার নিয়ম ছিল, ওখানে ইয়ে করে কুয়ো পাড়ে শৌচকর্ম তারপর ঘরে ফেরা। আমার ঠাকুরদা একমাত্র বাইরেরটায় যেতেন না শারিরীক কারণে। এবার বাইরে সে সময় মানে তখন আমার 5/6 বছর বয়স, সেই তখন মহাভারত সিরিয়াল শেষ হয়েছে সবে বা চলছে হয়ত শেষের দিকে, তখন থেকেই পায়খানা আমার বড় প্রিয় জায়গা। কেউ বলার নেই কিছু, কেউ শোনার নেই, আপন মনে নিজেকে ভীম, হনুমান, রাম যা খুশি ভাবো। ছোটবেলায় আমি প্রথম প্রথম জোরে জোরে ভাবতাম, মানে বলে বলে, পরে একদিন বাবা শুনে ফেলেছিলেন তারপর মনে মনে চেপে ভাবি।
সে সময় সকালে বাহ্যে যেতে হলে আমায় আদিম পোশাকে যেতে হত কারণ গামছায় ছোঁয়া লেগে যেতে পারে। 
আমি চিরকাল শুনে এলাম পুরুষ মানুষ আবার লজ্জা কি ? আমার যে সম্পূর্ণ লজ্জা লাগত তা নয় আবার একটা অস্বস্তিও হত। তখন যেসব রসিকতা হত সেসব আজ হলে টিভি চ্যানেল ভেঙে পড়ত, মোমবাতি মিছিল হত, বিদ্যজন ক্ষেদোক্তি করত, বিশাল হাঙ্গামা একটা হত নিশ্চিত। এখন নেশন জানতে চায়, তখন সেসব কৌতূহল ছিলনা। আমি মুশকিলে পড়তাম রসিকতাটার গুরুত্ব না বুঝে, অথচ আমি যে আকর্ষণের কারণ স্বরূপ এটা বুঝতে পারতাম, ওতেই একটা আনন্দ। জানিনা, ফ্রয়েড তখন থেকেই সুপ্ত ছিল নিশ্চয়।
এবার রাতের বেলায় ছিল অন্যগল্প। রাতে আমার ভীষণ ভয় ছিল, বাথরুমে সে সময় জ্বলত একটা বিচ্ছিরি হলুদ আলো, আর সে সময়কার বাথরুম দিনে রাতে পুরো আলাদা জিনিস। আমি দরজা বন্ধ করতে পারতাম না, আর আমার দুই ঠাকুমার কাউকে না কাউকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পা দেখাতে হত। মানে কেউ আছে আমি একা নই। আমার সেজো ঠাকুমা আমি তাকে 'সমা' বলে ডাকতাম, তিনিই এই কাজ বেশি করতেন। আমার মা জীবনে এসবে পাত্তা দেননি, আর সমা প্রত্যেকবার বলত, 'হাগা পাইলে বাঘের ভয় লাগেনা'। আমি কিকরে বোঝাব বাঘ আর ভুতে বিস্তর তফাৎ, বাঘেদেরও মানবিক কাজ কর্ম করতে হয় একটু সবুর করলেও করতে পারে, কিন্তু ভূতেদের তো সেসবের বালাইই নেই।
আজকাল সেরকম কল্পনা আর আসেনা।

No comments:

Post a Comment

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...