Tuesday, May 1, 2018

পলাতক, একটা গান আর আমি


'পলাতক' ছবিটা দেখেছেন? আমার হঠাত কাল অনুপ কুমারের কথা মনে পড়ে গেল, মানে সেই চরিত্রটার কথা (নামটা মনে পড়ছে না, দেখে নেবেন ইচ্ছে হলে), যে মাঝির কাছ থেকে একটা বেহালা কিনে নেয়, আর মাঝি দুটো পদ শিখিয়ে দেব বলায় মনে করে বেড়ে দাঁও মেরেছে।
আমি কাল বিশেষ একটি কাজে অন্ধেরী গেছিলাম আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে, সাথে লাগোয়া কাজও দুটো ছিল। এবার ফেরার সময় চেষ্টা করেও লাগোয়া কাজ দুটো হয়নি। যারা আমায় চেনেন তারা কুকথা বলতে পারেন, তবে আমি সেরকমটা করিনি। এবার ট্রেন ধরতে হবে, প্রথম ট্রেনটা এমন ভিড় ছিলো আমি দেখেই আর চেষ্টা করিনি। পরের ট্রেনটার জন্য একদম সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, তবে এতেও ভিড়, যাহোক উঠে পড়লাম। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েই একটা গান বাজনার আওয়াজ পাচ্ছিলুম, আমি ভাবলাম যেমন হয় আরকি অন্ধ কানাই গান গাইছে হয়ত। একটু ধাতস্থ হওয়ার পর, 'ভোলা শঙ্করা' (এই দুটো শব্দই উদ্ধারীকৃত) বলে একটা গান কানে এল আর সাথে করতাল আর হাতে বাজানো একটা বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ যা অনেকটা ডমরুর মত। 
এবার কয়েকটা স্বস্বার্থে প্রচারিত কথা, আমি মিউজিক বলতে বুঝি গান, আর যেকোন তারওয়ালা বাদ্যযন্ত্র আমার কাছে পার্থক্য করতে পারেনা (এখন হয়ত গীটার আর সেতারের পার্থক্য করতে পারব), আর ঢোল, মৃদঙ্গ, তবলা এই জাতীয় সবকিছুর শব্দই আমার কাছে এক। 

তা যেটা শুনছিলাম সেটাতে এক অদ্ভুত দৃশ্যপট আমার মাথায় এল। উচ্চারিত হচ্ছিল শিবের নাম, ভোলা এবং শঙ্করা এই দুটো নামই শিবের প্রশান্ত মূর্তির কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত সুরের খেলায়, কর্তালের ধ্বনিতে, সাথে ডম ডম আওয়াজে আমি সেই রাতে চলে গেছিলাম, যে রাতে এক যুদ্ধ শ্রান্ত, ভগ্নোউরু রাজা, তার শেষ বিশ্বাসযোগ্য সেনাকে সেনাপত্বিত্বে বরণ করে আদেশ করেন, 'আমি ততক্ষণ বেঁচে থাকব, যতক্ষণ না তুমি আমার শত্রুর রক্তে আমার শেষ তৃষ্ণা মেটাচ্ছ'। তারপর সেই সেনাপতি, সেই নিদ্রিত রাত্রিতে যুদ্ধের নিয়ম ভেঙে তার রাজাকে শেষ উপহার দিতে, পাঁচজনকে খুন করতে যায়। কিন্তু সেই রাতে অসহায় পাঁচজনের পাহারায় ছিলেন এক জটাজূটধারী যোগী। যোগী প্রলোভনে লিপ্ত হয়না কিন্তু আরাধনায় তুষ্ট হয়। এ যেন ঠিক সেই গান যেখানে একদিকে আরাধনা চলছে আর নেপথ্যে, অলক্ষে এক হত্যালীলা।
আমার ভাবনা এই অবধিই, তারপর ট্রেনে আমার ইচ্ছা হলো আমি যদি সেই পলাতকের আআংটি চাটুজ্জ্যের ভাই হতে পারতুম তো বড় ভালো হত, আজ রাতে বাড়ি ফিরতাম না, এদের সাথে এদের ঠেকে
চলে যেতুম, কিছু একটা শিখে গেলে দাঁওটা নেহাত মন্দ হতনা।
আলাপ টালাপ হল, যথা নিয়মে ট্রেন-ও থামল, আমিও নামলুম আর নেমেই মনে পড়ল, ডিম কিনতে হবে, দোকান খোলা পাবোতো!

No comments:

Post a Comment

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...