Saturday, August 15, 2020

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কাজ করতে করতে প্রলয় আর পিঙ্কি-র ঘরে বসে বসে ডিভোর্স হয়ে গেল। ডিভোর্সের একটা নতুন আইনি দিক আবিষ্কার হল, ভালবাসা থাকুক না থাকুক এক মুখ রোজ প্রায় ১৪/১৫ ঘন্টার বেশি দেখলে বেশিদিন একসাথে না থাকতে পারার।

ভালোবাসা আর একসাথে থাকা সমান্তরালে চলতে পারে কিনা এ নিয়ে প্রচুর ভিডিও, দেড় দু ঘন্টার ভ্যানতারা এসব হল। এর মধ্যে প্রলয় একদিন পিঙ্কি কে একটা চিঠি দিল, 👇


প্রিয়তমা পুরোনো বউ,

বহুদিন হল বেশ আনন্দে আছি, আশাকরি তুমি নাই, তোমার দিনরাত অকারণে চিৎকার করিবার অভ্যাসটি ব্যাহত হইবার কারণে। আমি দূরে থাকিয়াও, তোমার জন্য খুব আনন্দিত হইয়াছি, সরকার টিভি সিরিয়াল চিরতরে বন্ধ করিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়াছে বলিয়া। যাহা হউক, এইসব কথা পুরাতনীর সাথে প্রেমালাপের পক্ষে ভালো নয়, যাহা ভাল তাহা শোন।

আমি হঠাৎ আজ একটু সরকারী অনুমতি সাপেক্ষে বাজার ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলাম, সেখানে গিয়া দেখিলাম একজন কুল লইয়া বসিয়া আছে, টোপা কুল দেখিয়াই তোমার কথা মনে পড়িয়া গেল। তৎক্ষনাত ৪ কিলো ক্রয় করিয়া লইলাম। 

এক্ষণে আমার বিনীত অনুরোধ, পুরাতন হইবার অজুহাতে এবং অধিকারে আমি তোমার জীবন হইতে দুই তিন ঘন্টা আমার জন্য চাহি। এই কুল দিয়া তুমি একটু ভাল করিয়া কুলের আচার পাক করিও। 

হাঁ হাঁ, করিয়া উঠিতে হইবেনা, আমি মশলা কিনিবার পয়সা এবং তোমার মানসিকতার পরিবর্তনের হেতু উৎকোচ বাবদ নখসজ্জা এবং ফুচকা খাইবার নিমিত্ত কিছু টাকা পাঠাইয়া দিতাছি আর ৪কিলোই আমার নহে, উহার মধ্যে ২ কিলো তুমি উদরস্থ করিও।

আর বিশেষ কিছু নহে, আশা করি টোপা কুল গুলি দেখিয়া তুমি তোমার জিহ্বা নিঃসৃত রস সংবরণ করিতে পারিবে না। 

কুল খাইয়া পত্রপাঠ না হইলেও চিঠি লিখিব যদি না ইচ্ছা করিয়া খারাপ বানাইয়া না পাঠাও।

                                                 ইতি-

                                 তোমার পুরাতন বর।


পুঃ আচ্ছা, তুমি দুই কিলোর বেশি আচার লইবে না কিন্তু।


সায়ক চক্রবর্তী।

Wednesday, May 6, 2020

পুরাণ কথা ১

১।

বালখিল্যের অভিশাপ

নতুন দিনে গাইব গাঁথা
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ ত্রাতা।
নতুন করে গাইব তবে
মন কালি কলমের যোগে
অন্য কাল কথা।

ইন্দ্র তখন ঘোড়ায় চড়ে
রাজ্য দেখেন ঘুরে ঘুরে
ঘোড়ার ভারী খুঁড়ের ভারে
মাটি খসে ধুলো ওড়ে
পৃথ্বী বসে যায়।

ঠিক সেথায় তখন দৈববশে
যজ্ঞ করতে হিসাব কষে
আঙ্গুল প্রমান প্রবল তেজী
বালখিল্য মুনিরা জেদী
ছিলেন বিদ্যমান।

গ্রহের ফেরে টলমল
মুনিরা সব পিছলে গেলো।
দেখে বুঝে এত কান্ড
অধর কোণে হাসেন ইন্দ্র।
ক্ষেপল মুনিরা।

তারা রাগের বশে বলল শেষে
শাপ দিল জল নিয়ে কোষে
ইন্দ্রাসন তোর যাবে ঘুচে
যতই পা ধর দৌঁড়ে এসে,
এই করেছি ষড়।

হাপুস নয়ন কেঁদে কেটে
ইন্দ্র গেল দাদুর কাছে।
নেড়ে দাড়ি বলেন কেশে,
চারটি মুখে অল্প হেসে
কমলযোনি প্রজাপতি ব্রহ্মদেবতা।

"ফাজলামি কি যাবেনা তোর?
মরবি যখন একবারে মর।
খুঁচিয়ে দিলে যাবে ঘেঁটে
থাকো ঝুলে মুন্ড হেঁটে
দেখছি 'বি' অপশন"।

জানল দাদু কীর্তি রাজার
স্বর্গরাজ্য ভোগে এবার
জন্ম নিবে নতুন ইন্দ্র
শাপ দিয়েছেন মুনিবৃন্দ
পারবে না মা তরাতে।

একপ্রস্থ আবার কাঁদন
দাদু তবে কিসের আপন?
-আচ্ছা বাপু, জ্বালাস নে আর
হাজার বছর কর গিয়ে পার।
দেখি কি আছে তোর কপালে!

আরো আসছে...

সায়ক চক্রবর্তী।

শূন্য আর দাঁড়ির খেলা।



শুনতে যদি না চাও
তবে বন্ধ হোক
যাবতীয় ধ্বনি, স্বর, সুর।

যদি সত্যের অপলাপ হয়,
তবে স্তব্ধ হোক প্রথমেন্দ্রিয়।
যাবতীয় দৃশ্য, আলো, রঙ, রূপ
মিশে যাক আদিম অন্ধকারে।

যদি অজ্ঞাত থাকে সুখানুভুতি
স্পর্শ, চুম্বন, শৃঙ্গার এসব
তাহলে মিথ্যা।

ঘোর অন্ধকারে মহাশূন্যে
একা তুমি এবং অন্ধকার।
তুমি থেকে আমি হওয়াই
আলো থেকে অন্ধকারে যাত্রা।

অন্ধকারে দেখতে লাগেনা,
শুনতে হয়না, স্পর্শের অবকাশ নেই।
শুধু তুমি জানো, আমি কে
আমি জানি অন্ধকারের ক্ষমতা।

প্রসবক্ষণে আলোর জন্ম।
এসব কথা অন্ধকার জানে।
আমি জানি, তুমি এখনও আলোর সীমা পেরোওনি।

এসো, অন্ধকার অনন্ত অপেক্ষার ধৈর্য্য রাখে।
তোমার কাছে সুযোগ অসীম।

নাদ থেকে অনাদি হওয়া যায়,
আবার নাদবিন্দুতে বুড়ি ছোঁয়া,
অনবরত, অবিরাম, নিরন্তর...
শূন্য আর দাঁড়ির খেলা।

সায়ক চক্রবর্তী।

Thursday, April 30, 2020

ডাইনের দশা

ওমিও বাবুর মা একটা কথা খুব বলতেন, নিজের সম্বন্ধেই, তার নাকি,'ডাইনের দশা'। ও আচ্ছা, গল্পটা শুরু করার আগে একটা ব্যাপার খোলসা করে নিই। ওমিও বাবুর নামের বানান, অমিয় কিন্তু উনি নিজেই নিজের নাম ওমিও উচ্চারণ করেন, তাই সেরকমই থাকল। এবার গল্প, ডাইনের দশার ঠিক মানে ওমিও বাবুর মা কোনোদিন বলতে পারেননি। জিজ্ঞাসা করলেই একগাদা পুরোনো গল্প বিভিন্ন ফরম্যাটে সাজিয়ে বার বার বলতেন, যার মোদ্দা মানে এটাই দাঁড়ায় যে, এক একজনের ভাগ্যের ধরণ এমন হয় যে, আপাত ভাবে তাকে দেখে মনে হয়, সে খুব সুখী কিন্তু আদতে সে যে সুখ চাইছে তা সে কোনোদিনই পাচ্ছেনা, অথচ বাইরে থেকে তাকে হাসিখুশী এমনকি সাধারণ মানুষের যা কষ্টসাধ্য তা সে অনায়াসেই পাচ্ছে বলে মনে হয়। একটা দারুণ বৃষ্টির দিনে নিজের পুরোনো ছাতা হারিয়ে বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে ডাকব্যাকের রেইনকোট খুঁজে পাওয়ার মত ব্যাপার, আর কি!
যাক, এহেন ওমিও বাবু প্রচন্ড জ্যোতিষ বিশ্বাসী, রীতিমত পড়াশুনা করেন, দু'খণ্ডের পরাশরী হোরা শ্রাস্ত্র কিনে এনে ডিকশনারি ঘেঁটে ইংরাজী থেকে বাংলা মানে করে, প্রচুর কিছু জেনেছেন, কিন্তু ডাইনের দশার উপযুক্ত কোনো গ্রহাবস্থান ঠাহর করতে পারেননি। বর্তমানে অমিওবাবু পড়েছেন এক মহাফাঁপরে। মাস ছ'য়েক আগে তার এই সাড়ে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে ওমিও বাবুর মা ইহলোকের মায়া সংবরণ করলেন। ফলস্বরূপ হঠাৎ করে ওমিও বাবু তিন খানা ঢাউস ঘর, একখানা ইয়াবড় ঠাকুর ঘর আর একটা দৌড়াদৌড়ি করে স্নান করা যায় এরকম স্নানঘর সমেত গোটা একটা বাড়ির মালিক হয়ে উঠলেন, এককথায়, অথৈ জলে পড়লেন ওমিও বাবু। ওমিও বাবু চাকরি কোনোদিন করেননি, চাকরি করতে হবে এরকম চিন্তাও তার মাথায় আসেনি কখনও আর তার মা ও কোনোদিন চাকরি করা নিয়ে কিছু বলেননি। চাকরি কেন আর কিছু নিয়েও ত্রিশোর্ধ্ব একজন ছেলের মায়েরা যা যা নিয়ে বলতে পারেন তার কিছুই বলেননি। এরকম অবস্থায় যা হয়, মৎসমুখী কেটে যাওয়ার পর কিছু লোক ওমিও বাবুকে জ্ঞান দিতে এল। সাধারণত এরকম জ্ঞানদাদের উদ্দেশ্যে ওমিও বাবু যা করে থাকেন, অর্থাৎ কিনা দু'কানের যথার্থ ব্যবহার, মস্তিষ্ককে কোনোরকম ব্যাঘাত না করে, তাই করছিলেন। কিন্তু এরমধ্যে একদিন পিলু এসে হাজির, এক ঝুড়ি আম নিয়ে। দেখেই ওমিও বাবুর গা গুলিয়ে উঠল, এই একটি জিনিস যা আমবাঙালী হয়েও ওমিও বাবু সহ্য করতে পারেন না। পিলু এতদিন পর এল, তাই, "আমি আম খাইনা, তুই এসব নিয়ে যা", এটা তিনি বলতে পারলেন না। পিলু এসে মন দিয়ে ওমিও বাবুর বাড়ির দেওয়াল, ছাদ, বারান্দা সব প্রায় দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখল, তারপর সোফায় বসে একটা বড় সিগারেট ধরাল। এই পিলু মাধ্যমিকে নোটস নিতে আসত, ওমিও বাবুর থেকে, বহু উত্তর বলে দিয়ে বিরক্ত হয়ে, শুধু পিলুর বাবার, "অরে একটু দেইখো, তোমার তো মাথাখান শার্প, অরে একটু উৎরাইয়া দিও, আমার বংশের প্রথম কেউ ম্যাট্রিক পাশ হইবো", এই কথাগুলোর জন্য ওমিও বাবু কোনোদিন ওকে ত্যাগ করেননি। তাতেও, মাধ্যমিকে পি ডিভিশন পেল, তারপর কোনোমতে  দু'বারের চেষ্টায় হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেই, ইট, বালি, সিমেন্ট এর ব্যবসায় নেমে গেল। দুটো তিনতলা বাড়ি এখন ওর, পিলু এখন নাকি নামকরা বিল্ডার। বিল্ডার কথাটার সাথে বডির একটা অদ্ভুত যোগ আছে, যেকোন বিল্ডারদের একটা বিশেষ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকে, সে লোহা তুলুক, আর বাড়ি তুলুক। পিলু সিগারেটের ধোঁয়া সিলিং এর দিকে উড়িয়ে, কলারটা একটু তুলে বকলসের মত একটা সোনার হারকে গলার মধ্যেই গুছিয়ে নিয়ে, বলল," এবার কি করবি?"
এতদিন সবাই কি করতে হবে বলে দিচ্ছিল, এই প্রথম কেউ ওমিও বাবু কি করতে চায় জানতে চাইল। এরকম প্রশ্ন আসতে পারে, ওমিও বাবু ভাবেন নি, কি করবেন তাও ভাবেন নি। নেড়া মাথাটায় হাত বুলিয়ে, গোবেচারার মত মুখ করে তাকালেন। পিলু বলল, "ইনকাম পাতির কি ব্যবস্থা তোর? কাজ বাজ তো কিছু করিস না?" ওমিও বাবুর বাবা এবং তারপরে মা ওমিও বাবুর জন্য একটা মাসোহারা পাবেন এরকম ব্যবস্থা করে গেছেন, আর মা বলে গেছেন এলাইসির দালাল সমীর বাবুর সাথে কথা বলতে, উনিও সম্ভবত আজকালের মধ্যেই আসবেন।
-শোন তুই ছোটবেলার বন্ধু, আর আমায় অনেক হেল্প করেছিস তাই তিনটে কথা বলব, পিলু বলে চলল।
-অনেকে ভাবে পিলু সরকার, অতীত ভুলে গেছে, সেটা ঠিক না। পিলু সরকার কখন কোথায় কি করতে হয় সেটা জানে।
বলে নিজের মনেই হাসল একটু, আবার কলার ঠিক এবং সোনার বকলস গুছিয়ে নিল। এরকম সময় সময়োপযোগী অভিব্যক্তি ওমিও বাবু করতে জানেন না। তিনি একটি নাতিবৃহৎ হা মুখ নিয়ে পিলুর কথা শুনতে লাগলেন।
-শোন, তুই যা ছেলে একা সামলাতে পারবি না। এ বাড়িও সামলাতে পারবি না। ভাবিস না আমি তোর বাড়ি হরপাতে এসেছি। তবে হ্যাঁ একটা ডিল দেব। আমার এক চেনা বিল্ডার আছে, তার এক আইবুড়ো মেয়ে আছে, কিছু একটা কারণে বিয়ে হয়নি, সেটা তোর জেনে কোনো লাভ নেই।
এই পর্যন্ত বলে পিলু কি একটা ভাবল, তারপর আবার শুরু করল।
- সোজা কথা হল তোর একটা বিয়ে করা দরকার। এবার তোকে অন্ধকারে রেখে এই পিলু সরকার কোনো গেম খেলবে না। তোর এই বাড়িটা দেখেই ঐ ভদ্রলোক রাজি হয়ে যাবে, আর মেয়েটারও একটা বর চাই। তোর রেগুলার ইনকামে মেয়ে বা তার বাপের কোনো ইন্টারেস্ট নেই, উল্টে তোকে ওরা রাজার হালেই রাখবে। বড় রাস্তার ওপরে মেয়ের নামে তিন তিনটে থ্রি বিএইচকে ফ্ল্যাট আছে আমি একটা তোর নামে লিখিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করে দেব।
ওরকম হ্যাবলা মুখেই চেয়ে রইলেন ওমিও বাবু, তিনি শুনলেন বা বুঝলেন কিনা কিছুই পিলু বুঝতে পারল না।
- এই বাড়িটার বদলে, একটা থ্রিবিএইচকে মোটেই খারাপ ডিল নয়, উল্টে বিয়ে থা করে একটা সেটেলমেন্ট। ভেবে বলিস, আমি কিছুদিন পর আসব আবার। হ্যাঁ কিছু প্রয়োজন হলে বলিস, আমি ব্যবস্থা করে দেব।
ওমিও বাবু নিজের ছকে দেখেছেন, তার বুধ নীচস্থ, দরকারী সময় কিছুতেই ঠিক কথা, ঠিক প্রশ্ন করতে পারেন না। পিলুর গোটা গল্পটায় অনেক গুলো প্রশ্ন করার জায়গা ছিল, যেমন, কি যোগ্যতায় তিনি বিয়ে করবেন, পিলুর কথায় কেন এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে ওমিও বাবুর সাথে বিয়ে দেবেন, বর যার চাই সে ওমিও বাবুকে কেন পছন্দ করবে, 'বর চাই' কথাটা যেন কেমন একটা শোনাচ্ছে ইত্যাদি আরো কিছু। কিন্তু এতদিন যারা,  "একটা কাজ করো এবার ওমিও", বা "এবার একটা বিয়ে করে ফেলো ওমিও, বাড়িটার ছিরি ফিরবে" বলেছে তারা শুধু করতে বলেছে, পিলু কিন্তু করিয়ে দেবে বলেছে। পুরো ছোটবেলার দানের প্রতিদান, "আমার খাতা দেখে টুকে নে"-র বদলে, 'আমি তোর বিয়ে করিয়ে দেব"। এই ব্যবস্থাটা ওমিওবাবুর একপ্রকার ভালো লাগল, তবে একবার বিয়ে করাটা জ্যোতিষ মতে উপকারী হবে কিনা দেখে নেওয়া দরকার বলে তিনি নিজের ছকটা একবার খুলে বসলেন। দেখলেন তার বিয়ে ব্যাপারটা বেশ বেশি বয়সে হবে, তবে সাড়ে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সটা বেশির দিকে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারলেন না। 
দিনসাতেক বাদে, পিলু আবার হাজির, ওমিও বাবুর আর ওকে কিছু জানানো হয়নি, ওকে দেখেই মনে পড়ল। এবার ওর সাথে একজন লোক, লোকটাকে ছোটবেলায় দেখলে নির্ঘাত ওমিও বাবু ভয় পেতেন এরকম দেখতে। এর নাম নিশিকান্ত সাহা, ইনিও বেশ ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখলেন। কথাবার্তা যা হল, তাতে এই দাঁড়াল যে, বাৎসরিকটা মিটলেই বিয়ে হবে, বিয়ের দিনক্ষণ সব তিনিই বুঝে টুঝে নেবেন।
এর আবার মাসখানেক পরে, পিলুর ফোন এল, জিজ্ঞাসা করল, ওমিও বাবুর মেয়েকে দেখার কোনো ইচ্ছা আছে কিনা! নারী চরিত্রের সাথে ওমিও বাবুর প্রায় সম্পর্ক নেই বললেই চলে, গল্প উপন্যাস পড়ারও তেমন অভ্যাস নেই ওমিও বাবুর।  কিন্তু কি এক ইচ্ছায় তিনি হ্যাঁ বলে দিলেন। 
নির্দিষ্ট দিনে, তিনি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছলেন, প্রিয়াঙ্কা ভালোনাম আর পিঙ্কি ডাকনামের একটি মেয়ে এল, মেয়ে বলার চেয়ে মহিলা বলাই ঠিক হবে এরকম মনে হল ওমিও বাবুর। কথা বলার সময় খুব হাসেন পিঙ্কি, হঠাৎ ওমিওবাবুর মনে হল, পিঙ্কির সাথে আগে দেখা হলে ভালো হত, কলেজে মেয়েদের দেখলে বিভিন্ন বন্ধুর মধ্যে যে উত্তেজনা উনি দেখেছিলেন বা অনুভব করেছিলেন, তা যেন আজ নিজের মধ্যে অনুভব করছেন। মনে মনে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলেন ওমিও বাবু। কি মনে করে উনি, পিঙ্কির কাছে তার জন্ম তারিখ, সময় গুলো চাইলেন। পিঙ্কি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, "কেন চাইছ এসব"? তারপর হঠাৎ করেই পিঙ্কির একটু তাড়া এসে গেল। সেদিনের মত বাড়ি চলে এলেন ওমিও বাবু। পরেরদিন আবার পিলুর ফোন, ওমিও বাবু বললেন, তিনি নিজেই একটু জ্যোতিষ চর্চা করেন। এতে পিলু কিছুটা আশ্বস্ত হল। কিছুক্ষন পর আবার ফোন এল এবং পিঙ্কির জন্মের তথ্যাদি ওমিও বাবু পেলেন, সাথে তাগাদা, "কি দেখলি জানাস"। 
ওমিও বাবু প্রথমে নিজের সাথে পিঙ্কির বিবাহ কুন্ডলী মিলিয়ে দেখলেন, ৩৬টা গুণের মধ্যে ২৭টা মিলে গেছে। খারাপ কিছু দেখতে পেলেন না ওমিও বাবু। বললেন পিলুকে। ক'দিন পর  আবার পিঙ্কির সাথে দেখা হল। এখনও বিয়ে হতে ৮/৯ মাস বাকি, দেখা করতে ভালো লাগলেও বাড়ি থেকে এতদূর আসতে ওমিও বাবুর ইচ্ছা ছিল না, তবু আসলেন। পিঙ্কি আজ কম হাসল। বার বার ওর ফোন আসল, আজ একটু উচাটন যেন ও। জিজ্ঞাসা করল, "তুমি হাত দেখতে পার?"। ওমিওবাবু বললেন, তিনি কুষ্ঠি দেখতে জানেন। আবার কিছুদিন পর দেখা হল, পিঙ্কি সেদিন নিজেই হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে দেখতে বলল, যেন চাইলেই ওমিও বাবু দেখতে পারবেন। হাতের দিকে তাকিয়েই ওমিও বাবু গুচ্ছের কাটাকুটি দেখলেন। হাত দেখা শেখা তিনি যে চেষ্টা করেননি, তা নয়, আসলে ঐ বুধ নীচস্থ হলে হাত দেখা আয়ত্ত করা যায়না। কিন্তু পিঙ্কির হাত দেখে কেমন যেন একটা হল।
কি মনে করে ওমিও বাবু আবার একবার পিঙ্কির ছকটা খুলে বসলেন, এবার কি হল, চোখের সামনে ওমিও বাবুর যেন একটা ঘটনা ঝিলিক মেরে উঠল। পিঙ্কিকে গুছিয়ে বলতে না পারলেও, বুঝিয়ে উঠতে পারলেন যে, বিয়ের আগে বা পরে পিঙ্কির জীবনে একটা দুর্ঘটনা বা অশান্তির সম্ভাবনা আছে। পিঙ্কি সেফিন খুব হাসল, ওমিও বাবুর থুতনি ধরে উলিবাবা বলে আদর করে দিল। এরপর দেখলেন, পিঙ্কি হঠাৎ একটু উদার হয়ে উঠল।  উপরি পাওনা হিসেবে পিঙ্কি একদিন ওমিও বাবুকে চুমু খেতে শিখিয়ে দিল। হ্যাঁ প্রায় শেখানোই বলা যায়, আর নিজেকে চমকে দিয়ে ওমিও বাবু দেখলেন উনি অসাধারণ চুমু খেতে পারেন। ধাঁ করে, ওমিও বাবু উপলব্ধি করলেন, 'বুধ নীচস্থ মানে ক্ষমতাহীন নয়', কথাটার মানে।
বিয়ে হওয়ার আগে ওমিও বাবু ধীরে ধীরে পুরুষ হয়ে উঠলেন, একদিন আয়নায় একটা ছোট্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন নিজের মধ্যে। বুঝতে না পেরে নিজের ছকটাই খুলে বসলেন আর শরীরের মধ্যে একটা শিহরণ বয়ে গেল, তার সন্ন্যাস যোগ রয়েছে বিয়ে করলেই তিনি বরবাদ হয়ে যাবেন। এর মধ্যে পিলুর ফোন এল, ইদানীং কেন কে জানে, পিলু ঘন ঘন ফোন করে আর পিঙ্কির ব্যাপারে জানতে চায়, আর এদিকে পিঙ্কি কি কারণে জানি, রোজই প্রায় কোথাও যেতে চায় ওমিও বাবুর সাথে, একলা।
বিয়ের দিন একটা ছোটখাট খণ্ডযুদ্ধ, লঙ্কাকান্ড এবং দক্ষযজ্ঞ একসাথে হয়ে গেল। পিঙ্কি, নিশিকান্ত বাবু, পিলু আর পিলুর বউ এর মধ্যে। ওমিওবাবু বুঝলেন পিলু আর পিঙ্কির মধ্যে একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল, যা এতদিন পিলুর বউও জানত না, কিন্তু পিঙ্কির বাবা বোধহয় জানতেন। সব শেষে পিলু চোখ রাঙিয়ে বলে গেল, "পয়সার জন্য তুই আমার পেছনে এত বড় বাঁশ দিলি, মনে রাখিস পিলু সরকার, উপকার আর বাঁশ দুটোই সুদ সমেত ফেরত দেয়"। 
একটু পরেই পিঙ্কি ঘরে ঢুকে ওমিও বাবুর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে, সে ওমিও বাবুকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে, তার সমস্ত অপরাধ ওমিও বাবু যেন ক্ষমা করে দেন। যা তিনি অপরাধ হিসেবে ধরেননি তার জন্য ক্ষমা করার প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু ওমিওবাবু সেই মুহূর্তে অন্য বিড়ম্বনায় পড়ে গেছেন। তিনি এখন আর বিয়ে করতে চাননা, পাহাড়, পর্বত, জঙ্গল তাকে টানছে। সংসার তার অসার মনে হচ্ছে, একজন গুরুর খোঁজ তার জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, কামিনী কাঞ্চন তার কাছে বিষ সম। তিনি নাতিবৃহৎ একটি হা মুখ করে, 'ডাইনের দশা'-র প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পারলেন, বরের টোপর মাথায় দিয়ে।

Saturday, March 14, 2020

সংশপ্তক...

তাহলে কি দাঁড়াল, না দাঁড়াবার জিনিসটি এখনও কিঞ্চিৎ নরম আছে, কিন্তু পোক্ত ভাবে যেটি উঠে আসছে ভেদ করে ব্রহ্মতালু তা হল, এক স্থিতি আর দুই গতি।
স্থিতি কি যা গতি কে আশ্রয় দেয়, গতি কি না যা, স্থিতি কে ভেদ করে এক পোক্ত বিশ্বাসের আশায় যে, এই যে আমি, এভাবেই আমি ছিলাম, আছি, থাকব, থাকতে হবে। স্থিতি অর্থাৎ প্রকৃতি, গতি পুরুষ,  ফর্ম নিয়ে ফকরামিতে যাবেন না। সিপিএম, বুদ্ধিজীবী আর বিজেপি এরা তিনজন জাস্ট বোঝার চেষ্টা করবেন না, এজন্মে কেন আগামী বহু জন্ম আপনাদের টাওয়ারে জ্যামার লাগিয়ে দিয়েছেন বিষ্টু খুড়ো।
মহাকাল আর নিয়তি, গতি ও প্রকৃতি, পুরুষ আর নারী, তেল মাখা বাঁশ আর এক নাছোড় বাঁদর... দেখুন একটা মাথা কাটা আড়াআড়ি আট তৈরি হচ্ছে। ছাড়া আর ধরার মাঝের যে ব্যবধান বাংলায় যাকে বলে স্পেস, সেটাকে বৈকুণ্ঠে বা কৈলাসে লীলা বলা হয়, বৈকুণ্ঠই যদিও লীলার আদি জন্মভূমি।
আসলে এই যে সিরিয়াল যাকে আমরা রোজ খিস্তোই, সেটা যে কি ভয়ঙ্কর রমণীয় হতে পারে ব্রেকিং ব্যাড, জিওটি, আরো এখন ব্ল্যাক মিরর, হেন তেন সব প্ৰমাণ করে দিয়েছে। যতই বল বোকা বাক্স, ফাক-শো, সবার হাতেই ডান্ডা আছে, গিন্নী আছেন, আছে তাদের নয় ছেলে, সবাই মিলে মিথ্যে কামড়ে দেবার সত্যি ভয় দেখাচ্ছে, বা উল্টোটাও ভয়ঙ্কর ভাবে সত্যি তাই পরের বউ মিথ্যের মত সত্যি হলেও ভাল লাগে তার ঘাড়, গলা, বুক ছুঁয়ে চুঁয়ে পড়া, স্পা করা চুলের গন্ধ নিতে নিতে, স্কেল দিয়ে মাপা নখের বাঁকা আঁচড়ে পিঠে বিষের মাত্রা আরো একডোজ চড়িয়ে, রোজ আদিম নাচের ভুল তালে ঠিক সময়ে পা মেলাতে।
বোঝানো মুশকিল, গল্প কি সোজা!
একটা লোক বউ এর সাথে ঝগড়া করেছে, করে বলেছে আমি তোকে আর পাত্তাই দেব না, আমার দশ দিকে দশটা আরো বউ এর মত প্রেয়সী আছে তারা ঢের ঢের ভালোবাসে আমায়। বউ বলল, যাও মাড়িয়ে এসো। তা সেই মাড়াতে গিয়ে প্রথম প্রেয়সী বলল, বেশ আমি তোমায় টপ ফিল দোব, আমার পায়ের নীচে আয়, লোকটা এল দেখল মজারে! কিন্তু পায়ের নীচে থাকলে টপ ফিল হয়না, বিপরীতাসনে চুম্বন এক মহা অক্সিমরন।
চলো দুনম্বরীর কাছে যাওয়া যাক, এ দেখি বলে আমায় বন্ধু ভাব। ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস।
তিননম্বরে, "চোখে চোখে কথা বল মুখে কিছু করোনা"... দূর ভাই, মুখে করোনা মানে? না খেলে বুঝব কি করে চালের পায়েস আর দুধ-ভাতের পার্থক্য কি।
চারে পুরো ফেমডম ভাই, সপাং-সপাং বেত চলবে, কিন্তু প্রতিটা আঃ কে কামের ঘনীভূত আহ তে বহিঃপ্রকাশ করতে হবে। হেবি জ্বালা হেবি ব্যাথা, হেবি এই বেরোবার আগের তিরতির কাঁপা, তারপর এক ফোটা জাস্ট একটু.... এইবার গভীর এ যাও, এক নিঃশ্বাসে লুকিয়ে রাখা রাক্ষসী রানীর কুটু কুটু ভোমরা তুলে আনার দায়িত্ব কার!
এই চলছে, নটি আমেরিকা, অমুক গট তমুক, এগিয়ে চলছে জীবন...সময়...
আটে বা নয়তে গিয়ে স্বামী ভদ্রলোকটি আসামী হয়ে গেছে কোন এক অকারণের মোহে। এবার লোকটা বলছে, অনেক হয়েছে বউ তুই ফিরে আয়, দশ দিক কেঁপে উত্তর আসে, "আমরা আছি সে নেই"।
লোকটা একদিন দশটা প্রেয়সীকে তৃপ্ত করে, নাচন কোদন শেষে বাড়ি ফিরে দেখে বউ পুরো অন্য মানুষ। শুধু লোকটা জানে বউ এর সাথে বেশি তর্কে যেতে নেই, জেতার ইতিহাসের সাথে সত্যির কোনো সুসম্পর্ক নেই।
সংশপ্তক....

Saturday, February 22, 2020

২১/২/২০২০

আজ ভাষা দিবস, বাংলা ভাষা দিবস, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস। এটার বিশেষ করে বিশেষ কোনো গুরুত্ব আমি কোনদিনও টের পাইনি। হতে পারে আমার অপারগতা। ছোটবেলায় ২১শে ফেব্রুয়ারি এলে মা বলত, 'আজ ভাষা দিবস'। আমি বুঝতে পারতাম না আজ তাহলে কি করতে হবে! এখনও বুঝতে পারিনা।
যাক, এসব বলতে আসিনি, একটা লেখা পড়তে গিয়ে একটা ছোটবেলার গল্প মনে পড়ে গেল। আমাদের কালে আমরা এমন অনেককিছু নিয়ে খেলতাম, ভাবতাম, গল্প শুনতাম যা আজকাল কেন আমাদের সময়কার অনেকেই দেখি জানেনা, শোনেনি। কে জানে কোথায় চুল কাটায় তারা!
ছোটবেলায় আমার কাছে, মামাবাড়ি যাওয়া একটা বিশাল ঘটনা ছিল, গরমের ছুটি আর পুজোর ছুটিতে যেতেই হবে। একদম যখন ছোট, আমার মামাতো বোন রিয়া, তখন বেদম দুষ্টু ছিল, ওকে নাকি বসিয়ে রাখা যেতনা। আমার মায়ের মামা বলতেন, "খালি মেরিগুল্লি পাক দিতাসে"। আমি ছোট থেকেই বেশি ছটফটানির মধ্যে থাকতে ভালোবাসতাম না। তো এহেন রিয়াকে ভয় দেখানোর জন্য তো একটা ভয়ঙ্কর কিছু চাই। আমার বড়মামা একটা বস্তু বা প্রাণী আবিষ্কার করেছিলেন, একটা না দুটো। প্রথমটা হল, জলুইজাঙ্গা আর ২য় টি দপাং দপাং। আমার যদ্দুর মনে পড়ে দুটোই আসলে একই প্রাণী। যার ইয়া বড় চেহারা, তিনটে ঠ্যাং, ও হ্যাঁ তাকে তিনঠেঙ্গো বলেও ডাকা হত। এই যে তিনটে ঠ্যাং, এর একটা থাকত আমার মামার বাড়ির মাথায়, একটা থাকত বাসুদা দের বাড়ির মাথায় আর ৩য় পা টা মান্টি দিদিদের বাড়ির মাথায়। এবার বাসুদা হল এক জনৈক আমার এখন তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু মনে পড়ছেনা। আর মান্টি হল আমার আরেক মামাতো দিদি, তাদের বাড়িটা বেশ দু মিনিটের হাঁটা দূরত্বে। এবার এই তিনঠেঙ্গোর তিনটে চোখ বা দুটোও হতে পারে সেটা সর্বক্ষণ দপাং দপাং করে জ্বলত।
গল্প এটাও নয়, গল্পটা হল একদিন আমি দুপুরে ঘুমোচ্ছি, এমন সময় রিয়া আমাকে অপার বিষ্ময় আর ভয় নিয়ে ডেকে তোলে। সেসময় রিয়া আমাকে 'সায়ক দাদা' বলে ডাকতে পারত না, 'তাক দাদা' বলে ডাকত। আমি ওর সেই ডাক শুনে উঠতেই ও বলল, "ঐ দেখ দপাং দপাং!" আমি দেখি দেওয়াল ধরে একটা শুয়োপোকা বাইছে।
আমি এখনও মাঝে মাঝে ভাবি, রিয়া ওরকম একটা ভয়ঙ্কর প্রাণী কে শুয়োপোকার মধ্যে কিভাবে খুঁজে পেল!
যাক, কি যোগাযোগ আমি পেলাম এই গল্পের সাথে ভাষাদিবসের আমি নিজেও ভাবছি!
তবে শুনলাম বৈদ্যবাটী তে নাকি সস্তায় ভাল গাঁজা পাওয়া যায়। একবার যাব ভাবছি। ও, বৈদ্যবাটীতে আমার মামাবাড়ি।

Thursday, June 20, 2019

রূপ দেখতে তরাস লাগে-৩

বীভৎস রাত্রি
অস্ত্রক্রীড়ার প্রাঙ্গন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেখে ক্রুরবুদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে তা থামিয়ে দিলেন। রাজগুরু কোথা থেকে ছুটে এসে লালকমল আর নীলকমল কে নিয়ে চলে যান। রাজগুরুকে কেউ এসে ভুল খবর দিয়ে অস্ত্রক্রীড়ার সময় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, বুঝতে ফেরে ফিরে আসতে আসতে যা ঘটার তা ঘটে গেছে। কিন্তু নীলকমল এরকম কিছু করবে তা তিনি ভাবতে পারেননি।
১৩ বছরের একটা ছেলে অতিকায় এর মত একজনের ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দিল, বিকট আর দুর্ধর্ষ ভাবতেই পারছেনা। ক্রুরবুদ্ধি সেই থেকে আর কোনো কথা বলেনি এখনও। নীলকমলের মা ছোটরানী ক্রুরবুদ্ধির ঘরে ঢুকতেই ফেটে পড়ে বিকট, - “তোমার ছেলে বলে কি নীলকমলকে কিছু বলা হবেনা?” রানী কি বলবে বুঝতে না পেরে বাবার দিকে তাকায়, বিকট আরো রাগে বলে, “তোমরা কিছু না করলেও আমি আমার বন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেব, আজ রাতেই নেব, সোজা পথে নাহলে বাঁকা পথে”।
বিকট আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, ক্রুরবুদ্ধি তাকে থামিয়ে বলে, “বাঁকা পথেও পারবেনা, নীলকমলকে হারাতে। যুদ্ধের কোন কৌশলেই ওকে হারানো সম্ভব নয়, নীলকমলকে হারাতে অন্য ছল করতে হবে...”।
রাণী হঠাৎ বলে ওঠে, “আমি জানি কি করতে হবে। আজ রাতে তোমাদের কোনো লোক যেন প্রাসাদের আশে পাশে না থাকে” এই বলে রাণী বেরিয়ে যায়। বিকট কিছু বলতে গেলে, ক্রুরবুদ্ধি তাকে থামিয়ে বলে, “এখন আমায় একটু একা থাকতে দাও, যা করার কাল দেখা যাবে”। হাতে হাত ঘষতে ঘষতে বিকট আর দুর্ধর্ষ বেরিয়ে যায়।
রাতে রাজা এসেছিলেন নীলকমলের কাছে, কিছু বলেননি শুধু একবার নীলকমলের হাতের উপর হাতটা রেখেছিলেন। একেবারে একা হয়ে যাওয়ার পর নীলকমল ভাবতে বসে, আজ সত্যিই কি হল! অতিকায় যখন লালকে খেলাচ্ছিল নীলকমলের মনে হচ্ছিল শুধুই বোধহয় তাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু হঠাৎ কেন যেন মনে হল অতিকায় চাইছে লালকমলকে মারতে। চারিদিকে তাকিয়ে নীলকমল দেখল রাজগুরু কোথাও নেই, দূরে বিকট আর দুর্ধর্ষ অদ্ভুত এক পৈশাচিক আনন্দে হাসছে। কি যে হল তারপর তা নীলকমল নিজেও ভালো করে জানেনা, শুধু মনে পড়ে কে যেন কানের কাছে বলে উঠল, “যাও নীলকমল, লালকমলের বিপদ”। এরপর কিভাবে নীলকমল সেখানে পৌঁছল, কিভাবে সে যুদ্ধ করল, কিছুই তার ভাল করে মনে নেই। শুধু অতিকায়ের মাথাহীন দেহটা যখন লুটিয়ে পড়ল তখন যেন আবার হুশে ফিরল নীলকমল।
এই এখনও যেমন ঘুম আসছে না নীলকমলের কোথাও যেন কিছু খারাপের একটা আভাস পাচ্ছে। যবে থেকে এই ক্রুরবুদ্ধি আর তার দলবলেরা এসে জুটেছে তবে থেকেই নীলকমলের মন কু ডাকছে, তবে আজকের রাতে যেন বিশেষ কিছু একটা ঘটবে বলে মনে হচ্ছে।
রাজবাড়ির চারিদিক শুনশান যেন শশ্মানের নীরবতা, একটা কুকুরও ডাকছে না কোথাও। রাজার শোওয়ার ঘরে একটা হালকা আলো জ্বলছে, রাজার অনিদ্রা রোগ আজ আবার মাথা চাড়া দিয়েছে, ঘরে সুগন্ধী তেল আর জড়িবুটির খোশবাই কিন্তু রাজার ঘুম আসছে না। রাজবাড়ির বাইরে কোথা থেকে যেন একটা কালো শকুন এসে পাক খেতে লাগল, তিন চার পাক খেয়ে শকুনটা রাজবাড়ির ছাদের প্রাচীরের উপর বসল, আর সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত ঠান্ডা হাওয়া যেন রাজবাড়ির উপর চাদর চড়িয়ে দিল।
চুপ করে শুয়ে থেকে ঘুম আনার চেষ্টা করেও নীলকমলের কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না। নিস্তব্ধ রাত্রিতে কোথা থেকে একটা গুণগুণ আওয়াজ যেন নীলকমলের কানে আসছে। নীলকমল এক ঝটকায় শরীরটাকে সোজা করে হাতে তার প্রিয় ছোট্ট ছুরিটা চেপে ধরল। বন্ধ ঘরের মধ্যেও কোন এক অজানা কারণে প্রদীপের শিখা কেঁপে উঠল। নীলকমল যেন আবার শুনতে পেল কে যেন বলছে, “বিপদ, বিপদ”। দরজা খুলে নীলকমল অন্ধকারের মধ্যে বেরোল। অন্ধকারে হাঁটাচলা করা নীলকমলের বহুদিনের অভ্যাস, সে অনায়াসে নিঃশব্দে লালকমলের দরজার কাছে চলে গেল, দেখল লালকমলের ঘরের দরজা খোলা, অজানা আশঙ্কায় নীলকমলের স্নায়ু মুহুর্তের ভগ্নাংশের জন্য কেঁপে উঠল। নিকষ অন্ধকারে নীলকমল অনুভব করল লালকমলের ঘরে অন্য কেউ আছে। ছুরিটাকে খাপ থেকে বার করে আলগোছে হাতের মধ্যে নিয়ে নিশব্দে এগোতে লাগল নীলকমল। হঠাৎ সমস্ত চরাচরকে আলোকিত করে বিদ্যুৎ চমকে উঠল আর সেই ক্ষণিকের আলোতে এক অপার্থিব দৃশ্য দেখে নীলকমল মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এক বিশালদেহী বীভৎস দর্শন নারী ঘুমন্ত লালকমলকে একহাতে পুতুলের মত তুলে নিয়েছে। অন্ধকার ফিরে আসতেই নীলকমল বুঝতে পারল তাকেও সেই বিশালদেহী তুলে নিয়েছে, নীলকমলের নড়ার ক্ষমতা নেই।
নীলকমল দেখতে পেল তাদের দুজনকে নিয়ে সেই বিশাল নারী রাজবাড়ির ছাদের উপর উঠল। নীলকমলের নড়ার ক্ষমতা না থাকলেও সব দেখতে পাচ্ছিল। ছাদের উপর তার মায়ের দেশের সব বিকৃত দেখতে লোকজন, সবাই মিলে চিৎকার করছে। আর একদিকে বিকট রাজামশাই আর রাণীকে ধরে রেখেছে। রাজামশাই আর রাণীমা যেন মন্ত্রমুগ্ধ পুতুলের মত হয়ে আছে, নীলকমল বুঝতে পারল তাদের উপর মায়া করা হয়েছে।
হঠাৎ একটা গলা শুনে নীলকমলের চিন্তা ভঙ্গ হল, “নীলকমলের উপর তোমার মায়া কাজ করেনি রুরু”, ক্রুরবুদ্ধির গলা। কথাটা শোনামাত্র সেই নারী নীলকমলকে তুলে ধরল তার মুখের সামনে আর ঠিক সেই সময় আকাশ চিরে আর একটা বাজ পড়ল। সেই আলোতে নীলকমল চমকে উঠে বুঝল এই নারী তার মা, মায়াবিনী, রাক্ষসী। চোখের চাউনির মধ্যে এক অদ্ভুত অক্ষম হতাশা আর রাগ দেখতে পেল নীলকমল। এরমধ্যেই বিকট চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করল, “রাজা রানীর কি হবে?”, আর একদল তারস্বরে চেচিয়ে বলল, “আমরা কি করব?”। প্রাচীরের ধারে বসা শকুনটা এক অলুক্ষুণে শব্দ করে ডেকে উঠল। ধৈর্য্যচ্যূতি হল রাক্ষসীর, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বলে উঠল, “আমি এখানেই থাকব, যার যার দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা হয়, যা!”। একথা বলতেই আবার হৈ চৈ হুলুস্থুল বেঁধে গেল, আবার এক হুঙ্কারে রাক্ষসী বলল, “রাজা রাণী ওভাবেই থাক”।
নীলকমলের হাত রাক্ষসীর মুঠোর বাইরে, নীলকমলের হাতে তার প্রিয় ছুরি, কিন্তু কি যেন এক মায়ার বশে তার হাত পা অবশ হয়ে আছে, লালকমল অচেতন। হঠাৎ কি একটা দেখে যেন প্রাচীরের গায়ে বসা শকুনটা একটু অস্থির হয়ে উঠল, আবার একটা দমকা বাতাস বয়ে গেল সবার মাথার উপর দিয়ে, সবাই কিছু একটার আশায় আকাশের দিকে চেয়ে রইল, যখন সবাই এরকম ভাবতে বসেছে, নেহাতই একটু ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে, ঠিক তখনই অতিকায় এক পাখি নেমে এল ক্রুরবুদ্ধির মাথার উপর দিয়ে। তার পাখার ঝাপটায় ক্রুরবুদ্ধি আর ল্যাজের বাড়িতে বেশ কিছু রাক্ষস পড়ে গেল। আচম্বিতে এই পাখির এসে পড়ায় খানিকক্ষণের জন্য রাক্ষসীর মায়ার বাধন যেন আলগা হয়ে গেছিল, নীলকমল টের পেল তার শরীরে সার ফিরে এসেছে। কয়েক মুহূর্তের অবকাশ, সূচীতীক্ষ্ণ ছুরির ফলা গেঁথে দিল রাক্ষসীর হাতে, ঝটকা দিয়ে হাতের আঙ্গুল সামান্য শিথিল করতেই নীলকমল এক লাফে বেরিয়ে এল রাক্ষসীর হাতের মুঠো থেকে।
অতিকায় পাখিটার ডানার ঝাপটায় সবাই একটু বেসামাল হয়ে পড়েছিল, একটু সামলে নিয়েই দুর্ধর্ষ পাখির দিকে এক মায়াবী আগুনের গোলা ছুড়ে মারে, পাখিটা এক মজার ভঙ্গীতে আগুনের গোলাটাকে গিলে ফেলে তারপর ল্যাজ তুলে তুবড়ির মত পেছন দিক দিয়ে গোলাটা বার করে দিয়ে, অদ্ভুত কায়দায় দুর্ধর্ষকে নিবৃত করে, জলদগম্ভীর স্বরে মানুষের ভাষায় বলে ওঠে, “আমি পৃথিবীর আদিম পক্ষীকুলের একজন, আমি ব্যাঙ্গমা”। এক অর্বাচীন রাক্ষস আবার কিছু একটা ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করতে গেলে বিশাল পাখি খানিকটা বিরক্ত হয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে একটা ডানার ভঙ্গী করে যার ফলে তার হাতের অস্ত্র একটা দড়িতে পরিণত হয়ে তাকেই বেঁধে মাটিতে ফেলে দেয়। পাখি নিজের মনে বলে ওঠে, “একটু শান্তিতে কথা বলার উপায় নেই?”। বীভৎস, দুর্ধর্ষ একটু হতচকিত হয়ে যায়, ক্রুরবুদ্ধির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সবাই মিলে আক্রমণ করবে কিনা। রাক্ষসী রানী সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেই নীলকমলকে খোজার চেষ্টা করে আবার সামনে এরকম একটা পাখি এসে পড়ায় বুঝতে পারেনা প্রথমে কি করবে। ব্যাঙ্গমা সবাইকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে তার ডানা তুলে থামায়। ক্রুরবুদ্ধি এগিয়ে এসে বলে, “কি করতে এসেছ? কি চাই তোমার?” ব্যাঙ্গমা চোখ ঘুরিয়ে রাক্ষসী রানীর হাতে অচেতন লালকমলকে একবার দেখে নেয়, তারপর একটু উদাস হয়ে গুণগুণ করে, “ কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া... এরকম গান শুনেছ তোমরা? ভবিষ্যতে হবে...”। বিকট, পাখির এই অদ্ভুত ব্যবহারে ক্ষেপে যায়- “মশকরা হচ্ছে নাকি?”। রাক্ষসী একবার নীলকমলকে খুঁজে নিয়ে পাখির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়- “কি চাই তোমার?”। -“নীলকমল লালকমলকে নিয়ে যাব”। রাক্ষসী একটু হেসে উঠল, নীলকমলকে দেখা যাচ্ছেনা। ক্রুরবুদ্ধি জিজ্ঞাসা করল, “ব্যাপারটা সহজ বলে মনে হচ্ছে নাকি পক্ষীরাজ?” ছকিতে ঘাড় ঘোরালো ব্যাঙ্গমা শরীরী ভাষায় একটু যেন ক্ষিপ্রতা, “সহজে তো আমি কোনোদিন ব্যাঙ্গমীর চুম্বনও নেওয়ার চেষ্টা করিনি আর...”, কথা শেষ হওয়ার আগেই আর একঁটা দমকা হাওয়া সবাইকে চমকে দিল আর প্রায় ব্যাঙ্গমার মত আকারের আর একটা পাখি ছাদে এসে নামল আর নেমেই বলল, “বলেছি না ভবিষ্যত ভ্রমণ করবে না, বড় বাজে কথা বল তুমি আজকাল”। বিকট দুজনের কান্ড দেখে অস্থির হয়ে গিয়ে নিজের হাতের অস্ত্রটা ছুড়ে মারল ব্যাঙ্গমীকে লক্ষ্য করে, ব্যাঙ্গমা অক্লেশে ব্যাঙ্গমীকে হ্যাঁচকা টানে প্রায় নিজের কোলে নিয়ে এসে ফেলল এবং প্রায় মুহুর্তের অবকাশে তার ডানার একটা সপাট ঝাপট পড়ল বিকটের পেট আর বুকের মাঝামাঝি, বিকট ছিটকে পড়ল। ক্রুরবুদ্ধি তার অস্ত্র বার করে চিৎকার করে বলল, “রুরু তুমি ভিতরে যাও। আক্রমণ কর!” রাক্ষসী হাতের রক্তের দিকে একঝলক তাকিয়ে নীলকমলকে আর একবার খুঁজে নিল আর বলল, “নীলকমল পালিয়েছে!” ক্রুরবুদ্ধি একথা শুনে কিছুক্ষনের জন্য একটু অন্যমনস্ক হল আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীকে শুন্যে লোফার মত করে ছুঁড়ে দিল আর তা পা এসে লাগল ক্রুরবুদ্ধির বুকে, মাটিতে পা রাখতেই ব্যাঙ্গমা বলে উঠল- “তুমি আসতে গেলে কেন? আমি একাই সামলে নিতাম!” ব্যাঙ্গমী ব্যাঙ্গমার পিঠের উপর দিয়ে ডিগবাজি খেয়ে আক্রমণ করতে আসা দুই রাক্ষসকে ধরাশায়ী করে বলল, “খুব করতে তুমি, খালি মুখে বড় বড় কথা। নীলকমলকে যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা সেটা শুনেছ?” ব্যাঙ্গমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল রাক্ষসী রানী চলে যাচ্ছে, লাফ দিয়ে সে রাক্ষসীকে ধরতে গেল আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিকটও ব্যাঙ্গমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, ব্যাঙ্গমা বিকটকে সুদ্ধু রাক্ষসী রানীর হাত চেপে ধরে একটা টান মারে, রাক্ষসী একটু বেসামাল হলে ব্যাঙ্গমা বিকটকে ধরে ফেলে, বিকটকে আছাড় মারতে যাবে এমন সময় ব্যাঙ্গমা নীলকমলকে দেখতে পায়। বিকটকে ছুঁড়ে ফেলে ব্যাঙ্গমা একটু অসাবধান হয়, নীলকমলকে ইশারায় ব্যাঙ্গমা তার পিঠে চড়ে বসতে বলে আর ঠিক সেইসময় রাক্ষসী ব্যাঙ্গমার দৃষ্টি অনুসরণ করে নীলকমলকে দেখে ফেলে আর সঙ্গে সঙ্গে প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় রাক্ষসী ব্যাঙ্গমার বুকের নীচে এক তীক্ষ্ণ শূল বিধিয়ে দেয় নীলচে গরম রক্ত ছিটকে পড়ে মাটিতে তারসাথে ব্যাঙ্গমার আর্ত চিৎকার। ব্যাঙ্গমী বাকি রাক্ষসদের সাথে লড়াই করছিল সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল রাক্ষসীর শুল ব্যাঙ্গমার বুকে বিঁধে আছে, পলকের ব্যবধানে ব্যাঙ্গমীর চোখমুখ পালটে গেল প্রবল চিৎকারের সাথে তার মুখ থেকে কালছে বেগুনী রঙ্গের আগুন বেরিয়ে এল, সামনের রাক্ষসরা প্রায় ছাই হয়ে গেল, দুর্ধর্ষ আর ক্রুরবুদ্ধি দিশেহারা হয়ে গেল, ব্যাঙ্গমা সুযোগ বুঝে রাক্ষসীর অন্য হাতে এক ঝতকা মারল আর তাতে লালকমলের দেহটা রাক্ষসীর হাত থেকে ছিটকে গেল। ব্যাঙ্গমী আর একবার বেগুনী আগুনের ঝলকে সবার চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়ে দিল আর তারমধ্যে ব্যাঙ্গমা লালকমলকে একহাতে ধরে ল্যাজটাকে বারিয়ে দিয়ে নীলকমলকে তুলে নিয়ে উড়ান দিল। ব্যাঙ্গমী ওড়ার আগে এক সপাট থাপ্পড় মেরেদিল রাক্ষসী রানীকে। রাক্ষসী ব্যর্থ আক্রোশে নীলকমলের উদ্দেশ্যে এক বাঁধন মন্ত্র উচ্চারণ করে বসল। মন্ত্রের তরঙ্গ নীলকমলকে ছোঁয়া মাত্রই ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী আকাশের মধ্যে এক অদৃশ্য দরজার ওপারে মিলিয়ে গেল।

সায়ক চক্রবর্তী।

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...