Wednesday, July 4, 2018

নেশার কথা


প্রথমে দু-একটা কোটেশন ঝেড়ে নি।
প্রথমটা সৃজিত বাবুর, উনি কি বলেছেন? না বলেছেন- 'মদ খেয়ে কেউ সহ্য না করতে পারলে সেটা কখনই মদের দোষ নয়', যে খেয়ে ছড়াচ্ছেন তার দোষ। আমার মদ খেয়ে তেলে ভাজা, এগরোল, চাউমিন, চিকেন কষা এসব সহ্য হয়না। সাত্ত্বিক কাবাব বা ড্রাই চিলি চিকেন দিলে তাদের নির্বিকার সমাধি হয় পেটের অন্তস্থলে। 
এবার ঠাকুর কি বলেছেন?, না বলেছেন 'কারোর দু-ছিপিতেই নেশা হয়, আবার কারোর দু বোতলেও কিচ্ছু হয়না'। এসব উর্দ্ধ মার্গের কথা, তবে আমি এক পেগ খেয়ে ভীষণ পানেচ্ছা সত্ত্বেও ছড়াতে দেখেছি। আবার ঠিকঠাক নেশা করে বোতল টোতল না তুলে শুয়ে পড়তে দেখেছি। পরদিন সকালে কি আফসোস! যাক, সেকথা সকলের কি আর সহ্য হয়!
এবার আমার মা কি বলতেন সেটা বলি, মা আজ পর্যন্ত যা যা বলেছেন, তার সবই তার মামা ইশ্বর গুরুদাস চৌধুরীর বাণী (উনি বই লিখে যাননি কেন ভাবি)। এবার বাণীটা- 'তাস, দফা, পাশা তিন সর্বনাশা' (ফরিদপুরের লোকেরা দাবাকে দফা-ই বলতেন)। এই বাণীটা আমার লেখার বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত নয় তবু কোটেশন কি ফেলে রাখা যায় বলুন। 
মদ, তারাপদ বাবুর প্রিয় বিষয়বস্তু ছিল লেখার, মদ ঠিক না মানে মাতাল, কিন্তু পেছনের কারসাজিটা ভেবে দেখতে হবেনা। তা যা বলছিলাম, মদ আমার বড় প্রিয়। তবে মদ খাওয়ার কিছু শর্ত আছে, মদ খাওয়ার আগে ট্যাংরা মাছের ঝোল ভাত বা ধরুন সর্ষে ইলিশ এসব খাওয়া শাস্ত্রে বারণ আছে, নইলে গাছতলা পেট্রোল পাম্পে শুয়ে থাকতে হয়। এবার আমি সেরকম বীর পুঙ্গবও দেখেছি যে একহাতে চপচপে এগ চিকেন রোল আর একহাতে ভডকার বোতল এহাত ওহাত করে খাচ্ছে। তারা মদ খেকো আমি রসিক মদ্যপায়ীদের নিয়ে কথা বলব। তবে দুখের কথা যাদের আমি রসিক মাতাল বলে চিনি তাদের সবারই গল্প শুনেছি বসে চিয়ার্স বলা হয়নি, এ আমার ছোটোবেলাকার দুঃখ। 
লিখতে লিখতে বুঝছি, তারাপদ বাবু কেন মাতালদের নিয়ে লিখতেন, কারণ মদ রসিকতার কারণ স্বরুপ তাকে ব্যাখ্যা করা যায়না, ব্যাখ্যা করা যায় মাতালদের। আমার এক খুব পরিচিতের মাতাল বলে বিশেষ সুখ্যাত আছে। তার গল্পগুলো আবার অ্যাক্টো না করে বলা খুব মুশকিল, তিনি কথায় তেমন বিশ্বাসী নন কাজে যতটা। আমার তিন মামার মধ্যে বড় আর ছোটো জীবনে এ রসে স্বেচ্ছায় নিজেদের বঞ্চিত করেছেন। ছোটোমামার তো গুজরাট চলে যাওয়া উচিৎ। আমার মা-র ভার্সান অনুযায়ী আমার বাবাও নাকি মদ সহ্য করতে পারতেন না, এটা বোধহয় পৃথিবীর সব স্ত্রীদেরই দাবী। তবে আমি দেখেছি মেয়েদের মদ খাওয়ার (পড়ুন টানার) ক্ষমতা অনেক বেশি, অবশ্য যারা পারে তারা পারে। তবে এক্ষেত্রে টীকা-টিপ্পনি চলতে পারে, বিশেষ বিশেষ রাশি লগ্নের জাতক জাতিকার মদ খাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে (#উইকি এ বিষয়ে মন্তব্য কাম্য)। 
এবার একটু বায়ু মার্গে যাব। তার আগে আবার কিছু বক্তব্য আছে। যেমন নেশা নিয়ে আমার তেমন কেন কোনরকমই ছুতমার্গ নেই।যেমন বিড়ি ছোটলোকেরা খায়, এ হচ্ছে বুর্জুয়াদের দাবী, আমার ঠোঁট চুলকায় সেটা আলাদা কথা। তবে মুম্বাইয়ের বিড়ি ভাল। এই যেমন আমার বাবা পাকানো সিগারেট খেতেন, অনেকে বলতেন ঐ ভাবে লালা দিয়ে মাখিয়ে অ্যাঃ। ZNMD দেখুন নাসিরুদ্দিন শাহ-ও ঐ ভাবে পাকিয়েছেন একবারও মনে হবে ঘেন্নার কথা। মোদ্দা কথা হচ্ছে, নেশা হলো শৌখিনতা আপনার হাতে যেটা নেশা উত্তম কুমারের হাতে সেটাই কেত!
দেখুন, নেশার স্বপক্ষে আমি কিছু বলছিনা, যারা নেশা করেননা, নুন খাননা, তেলের বদলে চারফোঁটা অলিভ অয়েল ছড়িয়ে রান্না করেন তারা ভগবান। তবে কিনা ভগবানও নেশা করেন এই যা রক্ষে।
এটুকু না বললে, সোমে আসতে পারছিলাম না, কাট পয়েন্ট খুব জরুরী বিষয়। এই যে গাঁজা, লোকে এটাকেও নীচু নজরে দেখে, আমিও দেখতাম অজ্ঞানতার দোষে। তাপ্পর ভাবলুম বুঝলেন, শিবের মতন ওরকম একটা লোক তিনি যে নেশা করেন সেটা কি খারাপ হতে পারে! বাংলা মতে যাবতীয় শুকনো নেশার ডিপার্টমেন্ট ওঁর। আর এধারে মদ হচ্ছে কারণবারি। বর বউ মিলে কারবারটা একবার ভাবুন, উফফফ। 
যাক যা বলছিলাম, গাঁজা খেলে একটা উর্দ্ধ চেতন হয়, জাগতিক বোধ আসতে আসতে কমে আসে, বানানোর মুনসিয়ানায় আপনি তিন স্তরের বাইরেও অনুভব করতে পারেন, তবে কিনা একটু এলেম চাই। এলেম না থাকলে জাস্ট খুশি থাকবেন, গাঁজা হ্যাপি ড্রাগ। 
এবার ভাবুন গাঁজা কতটা উপকারী, দেবাদিদেব কি এমনি বলেছে, সবাই কি আর 'লক্ষ্মী'র মত বউ পায়!
**একটা অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা হল, লক্ষ্মী বলতে মানে বউ-র কথায়। সেটা আরেকদিন হবে।
*** আমার বোতল প্রীতির কথাটাও বলা হলনা।

No comments:

Post a Comment

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...