Sunday, August 12, 2018

বরাহনন্দন

উপরের ভালো শব্দটার একটা চলতি বাংলা নাম আছে ‘শুয়োরের বাচ্চা’! গালাগাল হিসাবে নেবেন না, এটা প্রায় লব্জ, এক্সট্রা অর্ডিনারি বোঝাতেও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে কলকাতায় থাকতে রাস্তাঘাটে নির্বোধ লোকেদের উদ্দেশ্যে কখনও কখনও ব্যবহার করে যে একটা আনন্দ পাওয়া যেত মুম্বাই এসে সেটা পাওয়া যাচ্ছেনা মোটেই। আমি তো আর থেকে থেকে আমজাদ খান হয়ে যেতে পারবো না। এই সেদিন ট্রেনের মধ্যে এক আধদামড়া বুড়ো মাথার উপর একটা ইয়াব্বড় ব্যাগ ফেলে দিল, খুব জোরে ওর বাবাকে শুয়োর বলে ডেকে উঠলাম প্রতিবর্ত্ত ক্রিয়ায়, কি বলব মাইরি নিউটন সাহেব ফেল মেরে গেলেন, সমান তো দূরের কথা কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই, উল্টে সরি চেয়ে বসলো!
যে যাই বলুক বাঙালী সৃষ্টিশীল জাতি, আর কোথাও আপনি গালাগালির উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ দেখেছেন? মঙ্গলকাব্যে ‘গজভাতারী’ বলে খেউর করা হয়েছে, কল্পনা না থাকলে সম্ভব!  আমার তামাম ভাষার কিছুই জানা নেই তবু রাস্তাঘাটে লোকেদের শুনলে তো বোঝা যায় খানিকটা। তারপর দেখুন এই যে বরাহনন্দন এর আবার ‘গুড, বেটার, বেস্ট’ আছে মানে বিশেষণের প্রয়োগে তর, তম গুনের প্রকাশ আরকি। উদাহরণ দি, এমনি শুয়োরের বাচ্চা, খাঁটি শুয়োরের বাচ্চা আর হল পাক্কা শুয়োরের বাচ্চা। মনে মনে ভাবুন দেখবেন এই সামান্য বিশেষণ প্রয়োগে কেমন চোখের সামনে সেই ব্যক্তির ফ্যামিলি ট্রি তৈরী হয়ে যাচ্ছে। বাঙালীর গালাগালি নিয়ে গবেষণা করা উচিৎ।
ইদানীং বাঙালী ভালো ভালো গালাগাল যাকে খিস্তি বলে সেসব দিতে চায়না। ইংরাজীতে একটা শব্দ আছে ওটা অব্যয় পদের মত, নিজের, বাপের, যজ্ঞেশ্বরের শ্বশুরের যার উদ্দেশ্যে খুশি, এবং যেকোনো ইমোশনে ব্যবহার করা যায় আর শুনলেও আলাদা করে কিছু মনে হয় বলেতো প্রত্যয় হয়না। আগে বাঙালী অনামুখো, আটকুঁড়ের ব্যাটা এসব গালাগাল পাড়ত। একবার মনে মনে কল্পনা করুন (অন্য ভাবে করা যায়ও না) যাকে আটকুঁড়ের ব্যাটা বলা হচ্ছে তাকে কোন লেভেলে অপমান করা হচ্ছে, অথচ এগুলো কিন্তু নিরামিষ গালাগাল কেউ কিচ্ছু মাইন্ড করত না। তারপর ‘হারামজাদা’, এটাও কিন্তু বাঙালীর কাছে নিরামিষ গালাগাল কিন্তু আদতে এর মানে খুব গভীরে। বাঙালী আলু থেকে গালাগাল যা যা সহজপাচ্য এবং সদ্ব্যবহার যোগ্য তাকেই নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে।
দেখুন গালাগাল যেকোনো জাতিরই একটা সামাজিক মানদন্ড, যেমন ধরুন মহাভারতের সময়ও গালাগাল দেওয়া হত, কর্ণ ভীমকে মাকুন্দ বলে ক্ষেপাত, বনবাসের সময় দুর্যোধন দুঃশাসনেরা ভীমকে ‘গরু’ বলে অপমান করেছে কিন্তু সমোস্কিতো ভাষায় কতটা খুলত সেসব বা আদৌ অর্জিনাল গালাগাল গুলো আন-এডিটেড ভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা কে জানে! এই ধরুন ভীম, যখন কীচক বধ করেছিল, বা দুঃশাসনের রক্তপান, সেসময়ের যে বর্ননা আছে ও কি বাংলায় না লিখলে কোনো রস আসে? একটু ক্ষমা ঘেন্না করে নেবেন শেষ করার আগে একটু বেগ এসে গেল।
ভীম সেদিন এক ঘটি জল না মেশানো মাধ্বী খেয়ে নিয়েছে, চোখ টোখ একেবারে লাল হয়ে আছে, এদিকে সেদিন কর্ণ সেনাপতি হয়েছে দেখে দুঃশাসনের খুব আনন্দ, ভীমকে সামনে পেয়ে খুব বান মারল, ভীম এমনি বান মারামারি খেলছিল গা গরমের জন্য, এর মধ্যে ধাঁ করে দুঃশাসনের বানে ভীম মূর্ছা গেল। তখন আর দুঃশাসনকে দেখে কে! আসলে কড়া মদ খেয়ে একটুও রেস্ট হয়নি ভীমের সেদিন। যাক চটকা ভাঙলো দু মিনিটেই উঠেই আর কোনো বান টান নয় সোজা দশমণি গদাটা বাঁই বাঁই করে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিল দুঃশাসনের রথের দিকে। দুঃশাসন ছিটকে পড়ল দশ হাত দূরে  (এখন থেকে স্লো মোশন, একতা কাপুর স্টাইলে ভাবুন), ভীম গর্জে উঠল, “এবার আমি যাচ্ছি আমার প্রতিজ্ঞা পালন করতে, কারুর হিম্মত থাকলে বাঁচিয়ে নে দুঃশাসনকে”।
একটা তেমন তেমন খিস্তি ছাড়া এই সিনটা জমে বলুন! হুঁ  হুঁ বাওয়া, সেন্সর বোর্ড কি আজকের ফ্যাকড়া! যুগ যুগের ঐতিহ্য। নইলে এমনি এমনি কি গজাননকে ডাকা!

No comments:

Post a Comment

কুলের আচার ও পুরাতনী চিঠি

 মনে করুন, এভাবেই সময় চলছে... তাতে তো আর জীবন কাকু থেমে থাকবে না। এগিয়েই যাবে। মনে করুন এরকম ভাবেই ২০২৫ এর বসন্ত এসে গেছে, এভাবেই ঘরে বসে কা...