শনি
গ্রহের অস্থানে কুস্থানে দৃষ্টি থাকলে শুনেছি বিয়ে প্রেম ইত্যাদি মায়া মোহ ঘটিত
সুখ প্রাপ্ত হয়না। গঙ্গারামের দুঃখ টঙ্গে উঠলে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “কি
আর করা আমার যে সপ্তমে শনির বক্রদৃষ্টি”। এসব উনি মানেন বেশ, আমারও মনেহয় ওঁর রং
আর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া আর কিছু তো খারাপ ছিলনা, তা এমন পুরুষের কি বিয়ে
হয়না? দেদার হচ্ছে, পাইকারী দরে হচ্ছে। তবে আমার আরো একটা আরো একটা সন্দেহ আছে,
বিয়েটা হলনা বলে গঙ্গারাম যতটা হাহুতাশ করেন ততটা কিন্তু সেই নারীকে নিয়ে করেন না,
সাধারণত উল্টোটাই হয়ে থাকে, তাহলে কি প্রেম ঘটিত কোন কেস! গঙ্গারামকে যতটা চিনেছি
আমার ধারণা তখন সে সময়ে উনি বোধহয় নিজেই চাননি, তাই কবি? কি জানি। এরকম কিছু চিন্তা
কাজের মধ্যে মধ্যেই আমার হয়ে চলেছিল। গঙ্গারাম আবার এলেন দিন সাতেক পর। চোখের নীচে
কালি কিন্তু চোখদুটো উজ্জ্বল, খটকা টা রয়ে গেল।
গঙ্গারামের
সমস্যা হল কিছুতেই খুলে কথা বলবেন না, অনেক চেষ্টাতেও রা করাতে পারিনা, একটু
তরলীকৃত করে কথা বার করব তা উনি আবার ওসব ছুঁইয়ে দেখেন না। তা হঠাৎ কি মনে হল
বললাম, ‘শনি তো এবার সিধে হচ্ছে, এবার আপনার সব জট ছেড়ে যাবে’। ওষুধে কাজ হল,
আনমনে বলে ফেললেন, “কই আর হচ্ছে, যাও বা একটু শুরু হল, তা দুম করে ফুরিয়ে গেল”।
লোক্টা বলে কি নির্ঘাৎ মদন দেবের চক্রান্ত।এবার চেপে ধরলুম গঙ্গারামকে।
একটু
পিছিয়ে যেতে হবে আমাদের, ফ্যালাশব্যাক। তখন গঙ্গারাম যুবক, শ্রীমতি নামের একটি মেয়ের
সাথে গঙ্গারামের ইয়ে হয়ে যায়। তা বেশ চলছিল চিঠি পত্তরে প্রেম, তখন সেরকমই রেওয়াজ
ছিল, কিন্তু মেয়ের বাবা একেবারে ছবি বিশ্বাস। যখন দেখলেন মেয়েকে এমনিতে সামলানো
যাচ্ছেনা বাড়ি বদলিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন, গঙ্গারাম কিছু করার আগেই গল্পটার ইতি
হয়ে গেল। সেই দুঃখে গঙ্গারাম আজীবন ব্রহ্মচর্য নিলেন। এবার বর্তমান সময়ে (ও একটা
কথা যারা কূট প্রশ্ন ভাবছেন তাদের জন্যঃ- ‘যারা গঙ্গারামের দেখা পায় শুধু তারাই
জানে, গঙ্গারামের বয়স বাড়েনা’)।
বেশ
কিছুদিন আগে একদিন দুপুরে গঙ্গারাম গড়িহাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছেন ডাবের জম খাবেন
না লস্যি, এমন সময় একজন কে দেখতে পেলেন, হুবহু, অবিকল শ্রীমতির মত শুধু বয়সটা যেন
সামান্য বেড়ে গিয়েছে, তাতে ক্ষতি কিছু হয়নি বরং চোখে মুখে ব্যক্তিত্বের ছাপ যেন
বেড়ে গিয়েছে। গঙ্গারামের হৃতপিন্ডটা একলাফে টাকরায় এসে আটকেছিল, নেহাত তেষ্টায়
জিভটা শুকিয়ে গেছিল বলে পিছলে বেড়িয়ে যেতে পাড়েনি। ঐ এক লহমা, তার মধ্যে
ফ্ল্যাশব্যাক ফ্ল্যাশইন, মনে ভেজা ভেজা ভাব, চমক এতসব ভাবনা খেলে গেল যে মহিলা
কোন্দিক দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলেন গঙ্গারাম খুঁজে পেলেন না আর।
কথায়
আছে, ‘বাশ তুমি কেন ঝাড়ে, এসো আমার **’ আমার যে বংশ প্রেম এমনধারা ছিল তা কে জানত?
গঙ্গারাম তাঁর দুঃখবিলাশ নিয়ে নিজের মত ছিলেন কি দরকার ছিল জানতে চাওয়ার! এবার তার
নাম জানিনা, দেখতে কেমন জানিনা (ওরকম প্রচন্ড সুন্দরী তো গড়িয়াহাটে, যাদবপুরে,
পার্কস্ট্রীটে মায় প্রায় গোটা কলকাতায় আকচার ঘুরে বেড়াচ্ছে), তাকে নাকি আমায় খুঁজে
দিতে হবে। বাঁশটা ইমেজিন করুন।
এসব
কথা বলে, দুর্ভাবনায় ফেলে কখনই গঙ্গারাম বসে বসে মজা দেখেন না, ওঁকে তখন আর জাস্ট
পাওয়া যায়না, আরে বাবা দুচারটে শলাও তো করা যেতে পারে।
ক্রমশ...
No comments:
Post a Comment