‘একটু সরে বসুন’- মেয়েলি
কন্ঠস্বরে ছেলেটি একটু সরে বসল। মেয়েটির হাতে একটা বই, প্রেমের উপন্যাস। ছেলেটি
একটু আড়চোখে তাকিয়ে বইটার মলাট দেখতে পেল, গদগদে প্রেমের গল্প। ছেলেটি দীর্ঘশ্বাস
সমেত একটি অনুচ্চ ‘হুঃ’ করল। মেয়েটি চকিতে ফিরে তাকাল...
ওঃ, স্থান কাল পাত্র
এখানে অপ্রাসঙ্গিক। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে পার্কে, পুকুর পাড়ে, উদ্যান-কাননে,
ফ্লাইটের ওয়েটিং রুম যেখানে খুশি বসতে পারে। সময় লালচে ভোর, খর দুপুর, ভেজা বিকেল
বা ঝিম ধরা রাত যা ইচ্ছে হতে পারে। ওদের নাম রিমঝিম আর রৌদ্র, বা ভানু আর সবিতা বা সোম আর শর্বরী
যা কিছু হতে পারে।
রিমঝিম- ‘হু’ করলেন যে?
রৌদ্র- নাহ, আজকালকার বাজারে প্রেমের বই পড়ছেন...
মেয়েটি মলাটের পাতা খুলে দেখাল উপহারে পাওয়া।
রিমঝিম- আর আমি পড়ছিনা, বইটা হাতে আছে।
রৌদ্র- তাহলে কি ধরে নেব আপনি প্রেমের গল্পে বিশ্বাসী নন?
রিমঝিম- আদপেই না।
‘দেরী হয়ে গেল একটু না?’- মেয়েটা হাঁফাতে হাঁফাতে জিজ্ঞাসা করল।
‘হ্যাঁ, এই মাত্র মিনিট ১৫ আমি একটু বেশি ঘুমাতে পারতাম এই যা’- ছেলেটার
উত্তর।
‘কেন ওয়েট করাটা কি শুধু মেয়েদের কর্ত্তব্য?’- মেয়েটার গলায় ঝাঁজ।
সময়- স্বরোচিষ মন্বন্তরের কলিযুগ ই ধরুন।
স্থান- ENN Café.
পাত্র-পাত্রী- প্রদোষ এবং মালতী।
প্রদোষ- আপনি কি ক্যাপেচিনো উইথ আইরিশ হুইস্কি খাবেন?
মালতী- না, ব্ল্যাক কফি উইথ ব্রাউন সুগার।
প্রদোষ- বোঝাগেল।
মালতী- কি বুঝলেন?
প্রদোষ- না, আপনি বইটা পড়লেন তাহলে?
মালতী- পুরোটা নয়, ঐ নায়ক নায়িকার...
প্রদোষ- চুম্বন অবধি?
মালতী- হুম।
প্রদোষ- কেন চুমু কি খারাপ নাকি?
মালতী- না খারাপ বলিনি, তবে ওখানে লিখেছে, ‘নায়ক দুহাতে নায়িকার মুখটা তুলে ধরল,
আর নায়িকা আশ্লেষে চোখ বন্ধ করে নিল’।
প্রদোষ- তাতে ক্ষতি কি হল?
মালতী- ওমা, মেয়েটা যে ওখানেই সব কিছু হেরে বসল।
প্রদোষ- তা বটে। আপনার আইডিয়াল প্রেমে চুমুর সিকোয়েন্সটা কিরকম হবে?
মালতী- চুমু ছাড়া হবে।
স্থান- পৃথিবী
কাল- ১৫০০০০০০০ খ্রীঃপূঃ
পাত্র-পাত্রী- একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী T-rex (Tyrannosaurus Rex)
ভাষা- অনুদিত
পুরুষ- কিগো?
মহিলা- এখন?
পুরুষ- এখন তখন এর আবার কি?
মহিলা- নাহ, আমি একটু আগেই কালকের রাখা প্যারাসাউরোলোফাস এর কোমর দিয়ে জলখাবার
করেছি এখন আমি পারবনা।
পুরুষ- সত্যি বলছি এখন একটুও জোর দেবনা।
মহিলা- ওসব তুমি রোজ বল, তারপর তোমার খেয়াল চাপলে তুমি খুব দৌড়াদৌড়ি করে কর।
একটা ঘঁৎ শব্দ হল পুরুষটির নাক থেকে আর একটি ফোঁস সুলভ শব্দ মেয়েটির নাক থেকে।
তারপর পুরুষটি দেড় পা লাফিয়ে একটি মোক্ষম গুঁতো দিল মহিলাটিকে। শোনাগেল-
মহিলা- দেখলে কিরকম অসভ্য তুমি!
পুরুষ- এরকম অসভ্যতাতে তো তুমি দুহাজার বছর আগে কি দারুন আনন্দ পেতে।
মহিলা- ওরা দেখে ফেলবে না!
পুরুষ- ছেলে মেয়ে কেউ কোত্থাও নেই আমি দেখে এসছি।
স্থান- শুটিং ফ্লোর
কাল- ২০১৭ খ্রীঃ
পাত্র-পাত্রী- কৃষ এবং শ্রী
পাত্রপাত্রী গভীরভাবে জর্জরিত, কেউ কাউকে ছাড়বেনা। শ্রী এর মুখটা কৃষ একটু
তুলে ধরল,
শ্রী- এটা কি হল?
কৃষ- প্রেম।
শ্রী- তুই আগে থেকেই জানতি না?
কৃষ- তোকে বললে হত?
শ্রী- বলেই দেখতি।
কৃষ- এখন বললাম তো
শ্রী- কি বললি?
কৃষ- I love you.
শ্রী সোজা তাকিয়ে কৃশ এর দিকে, ঠোঁট দুটো হাল্কা কেঁপে উঠল।
‘কাট’, বলে একটা শব্দ এলো, ওরা দুজন দুজন কে ছেড়ে দিল। চারিদিকে ইতঃস্তত কিছু
লোকজন নিজেদের কাজে ব্যস্ত। কৃষ শ্রী এর দিকে তাকালো, শ্রী একটু চোখ নাচাল।
শ্রী- দেখলি তোকে এত সুযোগ দিলাম তবু তুই পারলি না।
ওদের ঝগড়াটা আবার শুরু হল।
========================================================
No comments:
Post a Comment