গঙ্গারামকে চেনেন? সেই যে
সেবার তার বিয়ে হলনা বিভিন্ন ছেঁদো কারণে, থাক সেসব কথা। বেচারার ভারী দুঃখ, এখানে
সেখানে ঘুরে বেড়ায়, লোকে ভালো-মন্দ ভাবে। গঙ্গারামের এসব এহ বাহ্য ব্যাপারে গা
নেই, কিন্তু তার মনে শান্তি নেই। গঙ্গারাম
জীবনে বিশেষ কিছুই চায়নি শুধু একবার বিয়ে করতে চেয়েছিল, তাও সেটা একটা সামান্য
পদ্যের জন্য আটকে গেল। তার হবু শ্বশুর মোটেই জানতে চাননি সে পাত্র হিসাবে কেমন বা
কি তার বংশ গরিমা, কবি মশাই আপন খেয়ালে সেসব গূঢ় তথ্য পাব্লিক করে দিয়ে একেবারে
হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেন।কবির বক্তব্য সংক্রান্ত জটিল প্রশ্নটা সেই থেকে ইস্তক
পরিবর্ত্নের আগে অবধি বাংলা পরীক্ষায় আসত।
আমি
মাঝে মাঝে গঙ্গারামকে পাই বুঝলেন। পাগলের মত সে ঘুরে বেড়ায়, কি বলে কেউ বোঝেনা,
তবু খুব দুঃখে যখন তার কানের পিছনটা নীল আর হাতের তেলো শুকিয়ে যায় তখন সে আমার
কাছে আসে। আমি দু-একটা প্রেমের কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি, সেসব কেউ পড়েনি আর যা
লিখি তা বলার মতন নয় আর সেসব কবিতাও রিপু দুষ্ট বলে গুণীজনে। প্রেমের ঢালাও বাজারে
এটুকুই আমার অব্দান তবু উনি আমার কাছে আসবেন। অত বয়ঃজ্যষ্ঠ লোক তাঁকে জ্ঞান দেওয়া
যায় বলুন?
এবার
কি হল, এই কাল রাতেরই কথা, ট্যারেন্টিনো একখানা মার-কাটারী ছবি দেখে শুয়ে পড়েছি
চোখে অনেকটা ঘুম আর একগাদা ভাবনা নিয়ে, হঠাৎ দরজাটা আলতো ফাঁক হয়ে গেল, গঙ্গারাম
ঢুকলেন। সেই দুঃখী দুঃখী মুখ, সেই নীল কানের পিছন, শুকনো হাতের তালু। গঙ্গারাম আগে
যা ছিলেন ছিলেন, বিয়ে ভাঙ্গার পর থেকে আপাদমস্তক নিপাট ভদ্রলোক, দুঃখে দুঃখে
সময়জ্ঞান একটু ঘেঁটে গেছে এই যা। আমি চাইলেই ঘুমুতে পারতুম কিন্তু ঐ মুখ দেখে আর
ইচ্ছা হলনা। চোখে একটু জল দিয়ে নিয়ে ওঁর সামনে গিয়ে বসলুম। আমি দুঃখের ইতিবৃত্তটা
জানি বলে আর ধানাইপানাই না করে বললাম, ‘সে কবিও আর নেই, আর তার বংশেও এখন আর তেমন
কেউ সাহিত্য চর্চা করেন না, বলেন তো আবার একটা মেয়ে দেখি? আপনি দেখে শুনে শুভ
কাজটা সেরে ফেলুন’।
কিছুক্ষন
আমার দিকে তাকিয়ে রইল গঙ্গারাম, কি ভাবল খানিক তারপর কিছু একটা বলব বলব করেও না
বলে চলে গেল। আমার কেন জানিনা গঙ্গারামের চোখে অন্য কোন কথা আছে মনে হল।
No comments:
Post a Comment