আমি ভেবেছিলাম নাম দেব সংস্কৃতে, অথচ দেবভাষাটা জানা নেই। একজন জ্ঞানী লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি ভাবছিলাম গাঁজাটা গঞ্জিকা হবে, সে বলল, ‘তাম্রকূট সেবনস্য সুফলম’- কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেল|
আর একটু ঢিল দেব...
পরশুরাম না তারাপদ রায় কার লেখায় পড়েছিলাম মনে নেই, গাঁজা হচ্ছে দশ আঙ্গুলী নেশা, সেরা নেশা। আমার সেরকমই ফিলিং...
এবার টেনে খেলব।
আমি প্রথম প্রথম যখন নেশা বুঝতে শুরু করি, তখনও ধরিনি আরকি, তখনই আমার পিতৃদেব আর আমার বড়মামকে দেখে আমার সিগারেট খাবার খুব শখ ছিল| সিগারেটের গন্ধটা আমাকে খুব ইয়ে দিত। আমার বাবা আবার পাকানো সিগারেট লালা দিয়ে চটকে সিগারেট বানিয়ে খেতেন, দেখনদারিটা ভাল না হলেও ঐ তামাকের গন্ধটা বেড়ে ছিল| তারপর বড়মামা, হেবি রিং ছাড়তে পারত(তখনও নায়ক সিনেমাটা দেখিনি কিনা), উফফ। একদিন লুকিয়ে বাবার পাকানো সিগারেটের মশলা আর পাতা এনে চেষ্টা করতে গেছিলাম, হয় ও নি মাঝখান থেকে মা দেখে ফেলে বাবাকে বলে দিয়েছিল| এই একবার এবং শেষবার কেস খেয়েও বাবা আমায় কেলায়নি উল্টে বলেছিল, “সময় হলে একসাথে খাওয়া যাবে”.... তারপর তো বাবা আমার চলে গেলেন আর অঞ্জন দত্ত ম্যাডলি বাঙালী বানালেন|
কাট টু,
আমার বয়স ১৮, আমি সিগারেট ধরেছি তখনও হপ্তায় একটা বা দুটো, বাহ্যে গেলেও বেগ পেতে সমস্যা হতনা। একদিন শুনলাম কে একটা স্কুল মাঠে বিয়ার এনেছে। আমার বুঝলেন একটা ধারনা ছিল মদ খেলে চরিত্র অবনতি হতে পারে। তা সেই বিয়ার আমরা ৬/৭ জন মিলে রাউন্ড মেরে খেলাম, কিসুই হলনা, শুধু বাড়ি ফেরার পথে সাইকেলে আসতে আসতে একটা ঢেকুড় ওঠার পর বুঝলাম চরিত্র অতি ফঙ্গবেনে ব্যাপার মদের সাথে তার কোনো সম্পক্ক নেই।
আবার কাট,
এবার বয়স ২১। তদ্দিনে আমি অনেক মদ খেয়ে বুঝেছি, বাজে লোকের বুদ্ধিতে মোমো টোমো না খেলে আমি কাত-ও হইনা আর বমিও করিনা। তবে মদ আমার হেববী লাগে খেতে| তবে শুকনো নেশা আমি সেভাবে করিনি। স্কুলের মাঠে একবার এক সিনিয়র কয়েক টান গাঁজা খাইয়ে বলতে চাইছিল, হাসবিনা কিন্তু, আমি ওর কথা শেষ হবার আগেই মিনিট ৪৫ হেসে নিয়েছিলাম।
তো সেবার দোলের দিন আমি, রকেট আর ভোদু মিলে রঙ টং খেলে বেরলাম, উদ্দেশ্যে বিয়ার খাব। কী করে জানব ছাতা যে কলকাতায় মদ্যপায়ীর এত উপদ্রব যে ওই দিন মদের দোকান সব বন্ধ রাখে! মাথা গরম হয়ে গেছিল, ভোদু বলল, “সিদ্ধির গুলি খাবি? হেবি নেশা হবে”। আমি তাচ্ছিল্যের সাথে কুলফির উপর চেটকে দেওয়া গোবর গোবর দেখতে জিনিসটা খেলাম, কিসসু হলোনা। আবার একটু বেশি পরিমাণে নিয়ে ডাবের জলে মিশিয়ে খেলাম। একই পরিণতি এবং ভোদুকে খিস্তি দেওন| সেও নেশা হওয়াবেই, এরপর চারটে জাম্বো রসোগোল্লা উইথ শিরা উদরস্থ করলুম, আর এক চোট খিস্তি দিলুম, দিয়ে সাইকেলে উঠলুম। বাড়ি এসে স্নান টুকু করেছিলাম তারপর সে মানে কী বলব! নেশা এই আমাকে চেপে ধরে আর আমি বারে বারে বলি “ঠাকুর আমি বাঁচতে চাই”।
এবার লং কাট-
১১ বছর পর। টেকনোলজি যত উন্নত হচ্ছে, মানুষের কী হচ্ছে কে জানে? তবে আমার এইসব নেটফ্লিক্স টিক্স দেখে ক’দিন ধরেই গাঁজা খেতে ইচ্ছা করছিল। তো ধরলুম এক সুহৃদকে। সে এক করিৎকর্মা ছেলে, চটপট জোগাড় করে ফেলল। ওহ, যেটা বলা হয়নি গাঁজা এর আগে আমি বার দু-তিনেক খেয়েছি এবং ছোটোখাটো রাস্তা ভুল টুল করা ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি। এবার আমি তিন চার টান দেওয়ার পর বুঝলেন মনে করে 'বাবার' (আমার বাবা নন) নামটা স্মরণ করে নিলুম।
কি বলব শিব ঠাকুর যে কেন গাঁজা খান তার মানবিক অনুমান আমি কিছুটা করতে পেরেছি। চোখের সামনে আমি দেখলাম, আমি সময়কে দেখতে পাচ্ছি। নিজেকে রজনীকান্ত মনে হচ্ছিল। একটা কথা বলার মাঝখানে আমি চার পাঁচটা কথার, ভাবনার জন্ম এবং তাদের ভবিতব্য দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি বহুবার ভেবেছি আমাদের পুরাণ টুরানে সময়ের যা হিসাব আছে মানে এই যুগ, চতুর্যুগ, মন্বন্তর এসবের হিসাব নিয়ে ভাবার সময় প্রতিবার আমার গুলিয়ে গেছে। এবার কি বলব মন্বন্তর পর্যন্ত কিলিয়ার হয়ে গেছে। এবার শুধু ব্রহ্মার এক দিন আর এক রাতের হিসাবটা বাকী।
সত্যযুগও শেষ হয়েছিল, ডাইনোসররাও মায়ের ভোগে গেল, আমার মত লোকেরও নেশা কাটল। কিন্তু কি বলব মাইরি, একঘর নেশা। জ্ঞানীগুণীদের কথার মর্ম এতদিনে উদ্ধার করতে পারছি। মগজে ধোঁয়া দেওয়ার উপমাটাও।
বিধিগত সতর্কীকরণঃ যারা রসিকতা বোঝেন না তারা পড়ে ফেললেও কোনোরকম উত্তেজনা বোধ করবেন না। গাঁজা সুখী নেশা, মনটা আনন্দে রাখে।
No comments:
Post a Comment